নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন একাধিক নেতা। তারা এলাকায় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন। এভাবে কৌশলে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
তবে মনোনয়ন লাড়াইয়ে নেমে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিভক্তিও তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। মাঠে সরব রয়েছেন জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীও। জানা যায়, শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই নূর-ই-আলম চৌধুর ওরফে লিটন চৌধুরীর একচ্ছত্র নেতৃত্ব ছিল শিবচর উপজেলায়। এখানে তার কথাই ছিল শেষ কথা। আওয়ামী লীগ আমলে কোনো দলই এখানে দাঁড়াতে পারেনি। ক্ষমতার পালাবদলে বদলে গেছে সেই চিত্র।
লিটন চৌধুরী এখন পালাতক। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে সরকার। দলটির অনেক নেতাকর্মীই গা ঢাকা দিয়েছেন। যারা এলাকায় আছেন, তারা চুপচাপ থাকলেও কেউ কেউ আবার বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোয় যোগ দিয়ে নিজেদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। মাদারীপুর-১ আসনে এবার বিএনপি থেকে চার নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা হলেন-শিবচর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামাল জামান নূরুদ্দিন মোল্লা, নাবিলা চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী ও উপজেলার সাবেক সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান। শিবচরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন এসব নেতা। জানান দিচ্ছেন নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা। কেউ কেউ আবার এরই মধ্যে ভোট চাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
একাধিক নেতা প্রার্থী হতে চাওয়ায় প্রত্যেকে একেকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ বিভক্তি উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে মাঝেমধ্যেই ছোট-বড় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে গ্রুপগুলো। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। উপজেলা আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেনকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। এরপর মাঠে কাজ করছেন তিনি। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি গ্রাম পর্যায়ে তার নেতাকর্মীরা গণসংযোগ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করে ফেলেছেন তারা।
এদিকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু মাঠে সরব রয়েছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠানে গণসংযোগ করছেন তিনি। নাবিলা চৌধুরী বলেন, আমি সব সময় বিএনপির রাজনীতিতে মাঠে ছিলাম। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি দলের জন্য। আমার শ্রম ও ত্যাগ সম্পর্কে দলের নেতাকর্মীরা যেমন জানেন, তেমনই হাইকামান্ডও জানে। তাই আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী বলেন, শিবচর আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকা।
এখানে জামায়াত বা জাতীয় পার্টির তেমন কোনো অবস্থান নেই। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় সবাই ভাবছে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেলে সহজে এমপি হওয়া যাবে। তাই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী এখানে। দুর্দিনে বিএনপিতে কাদের অবদান বেশি, তা দল বিবেচনা করবে। তাই আশা করছি আমি মনোনয়ন পাব। কামাল জামান নূরুদ্দিন মোল্লা বলেন, আমি সারা জীবন বিএনপির রাজনীতি করেছি। আওয়ামী লীগ আমলে ১৬ বছর এলাকায় আসতে পারিনি। আশা করি, দল আমাকে মনোনীত করবে। জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা সরোয়ার হোসেন বলেন, আমরা নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি।
প্রতিটি ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করা হয়ে গেছে। বেশকিছু এলাকায় সমাবেশ করেছি। এছাড়া হাটবাজারগুলোয় বৈঠক করছি। সমাবেশ ও বৈঠকগুলোয় ৫৩ বছরের ঘুস-দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম থেকে দেশকে বাঁচাতে জামায়াতকে একবার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান করছি। আগামী জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহান বলেন, বিএনপি অনেক বড় দল। সেখানে এক আসন থেকে একাধিক নেতা মনোনয়ন চাইতে পারেন। ফলে একাধিক গ্রুপ তৈরি হতে পারে। এটি দোষের কিছু না। তবে দলের মনোনয়ন একজনই পাবেন।'