নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও আপত্তি উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম বন্দরে বাড়তি মাশুল কার্যকর হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে বন্দরের জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গো বিল নতুন হারে আদায় শুরু হয়েছে।
এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ও হিসাবরক্ষণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত মাশুল কার্যকরের বিষয়টি জানানো হয়। এতে বন্দরের তালিকাভুক্ত সব শিপিং এজেন্টকে তফসিলি ব্যাংকে নতুন হারে অর্থ সংরক্ষণ করে ছাড়পত্র (এনওসি) নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংগঠনটির আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, হঠাৎ মাশুল বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক অংশীজনের আস্থা কমাতে পারে এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যয়বহুল বন্দরে পরিণত করবে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মাশুল বাড়ায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং, স্টোরেজ ও পরিবহন ব্যয় বাড়বে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস করবে। একই সঙ্গে জ্বালানি, গম, সার ও শিল্পের কাঁচামালের আমদানি ব্যয়ও বাড়বে, যা অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়াতে পারে। ফোরামটি অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত মাশুল কাঠামো নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছে।
বন্দরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সব ধরনের ভাড়া, টোল, ফি ও মাশুল ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী আদায় করা হবে। প্রতি ডলারের হার ধরা হয়েছে ১২২ টাকা, ফলে ডলারের মান বাড়লে মাশুলও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, পরিচালন ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়নের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মাশুল পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বন্দরের সেবা মান উন্নত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বন্দরের ৫২টি সেবা খাতের মধ্যে ২৩টিতে নতুন মাশুল প্রযোজ্য হয়েছে। গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মধ্যে কনটেইনার হ্যান্ডলিং খাতে সবচেয়ে বেশি মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ২০ ফুটের কনটেইনারের মাশুল আগের ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা করা হয়েছে—যা প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি। ফলে আমদানি কনটেইনারে গড়ে পাঁচ হাজার ৭২০ টাকা ও রপ্তানি কনটেইনারে তিন হাজার ৪৫ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে।
এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বর্ধিত ট্যারিফ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। তবে ব্যবসায়ীদের আপত্তির পর নৌপরিবহন উপদেষ্টার নির্দেশে তা এক মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন হারে ট্যারিফ কার্যকর করেছে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.