
সরকারি জমিতে গড়ে উঠেছে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, গ্যারেজ, ডেইরি ফার্ম ও কলোনি; সাবেক এমপি ও মেয়রের সম্পৃক্ততা, বার্ষিক আয় শত কোটি টাকা
আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী থেকে দক্ষিণ পতেঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মালিকানাধীন অন্তত ৩২ একর জমি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাবেক সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলরসহ অন্তত ৩৯ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি। সরকারি নথি অনুযায়ী, এসব জমির বাজারমূল্য প্রায় ৩২০ কোটি টাকা।
দখলকৃত জমিতে গড়ে উঠেছে ১৩টি কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, ১০টি গ্যারেজ ডিপো, তিনটি ডেইরি ফার্ম, তিনটি ট্রলি ইয়ার্ড ও চারটি আবাসিক কলোনি। এসব অবকাঠামো ভাড়া দিয়ে বার্ষিক শত কোটি টাকার বেশি আয় করছেন দখলদাররা।
২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই দখলযজ্ঞের সবচেয়ে আলোচিত নাম আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। তিনি সাগরপারের সাত একর জমিতে বিশাল কাভার্ডভ্যান ও এক্সক্যাভেটর ইয়ার্ড গড়ে তুলেছেন। তার বছরে আয় হচ্ছে কোটি টাকার ওপরে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জু পাউবোর ২.৫ একর জমি দখলে রেখে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ভাড়া দিয়ে বছরে উপার্জন করছেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
স্থানীয় সূত্র ও পাউবোর নথিপত্র অনুযায়ী, গোলাপুর রহমান, এরশাদ উদ্দিন, আকরাম সিদ্দিক চৌধুরী, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, মোস্তফা হাকিম, নুরুল হুদা চৌধুরীসহ আরও বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি এসব জমি দখলে রেখে গড়ে তুলেছেন ইয়ার্ড, স্টেডিয়াম, রেস্টুরেন্ট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
সরেজমিন ৪ জুন হালিশহরের টোল রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ‘জেএসবি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিশাল ইয়ার্ড, মোস্তফা হাকিমের নামে একটি মিনি স্টেডিয়াম, চায়না কোম্পানির কাছে ২.৭৫ একর জমি ভাড়া দেওয়া, এবং একাধিক জায়গায় কাভার্ডভ্যান, এক্সক্যাভেটর ও চিংড়ি ঘের চালু রয়েছে।
পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, “সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম শহর রক্ষায় প্রায় ২ হাজার ৬৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। এর একটি বড় অংশ এখন অবৈধ দখলে। দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য আমরা ইতোমধ্যে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি।”
এদিকে, অভিযোগ পাওয়া সাবেক এমপি দিদারুল আলম ও সাবেক মেয়র নিছার উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা আত্মগোপনে রয়েছেন।
তবে অনেক দখলদার দাবি করছেন, জায়গাগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের সম্পত্তি ছিল এবং সরকার অধিগ্রহণের পুরো অর্থ পরিশোধ করেনি। কেউ কেউ খালি পড়ে থাকা জমি ‘ব্যবহার’ করাকে অপরাধ হিসেবে মানতে নারাজ।
জনগণের করের টাকায় অধিগ্রহণ করা জমি এভাবে বেসরকারি আয় ও দখলের উৎসে পরিণত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবাদীরা। দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান ও দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।