নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ঘুষ গ্রহণের চাঞ্চল্যকর অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা নসরুল হামিদ। একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে এক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের লিখিত চুক্তি করেন তিনি। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিপত্র পরে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ঘুষচুক্তির বিষয়টি জানার পর প্রধানমন্ত্রী তার মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন নসরুল হামিদকে পদত্যাগে বাধ্য করতে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুখ্যসচিব ফোন করে বিষয়টি অবহিতও করেন তাকে।
তবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই আসে একটি ফোন কল—যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এক ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির ফোনে জানানো হয়, “বিপু পদত্যাগ করবে না।” এর পর আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং পরবর্তী দুটি সরকারেও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে বহাল থাকেন তিনি।
প্রসঙ্গত, নসরুল হামিদ বিপু ঢাকা-৩ আসন থেকে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার কাঁধে। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বে থাকাকালে পারিবারিক ব্যবসায়িক পরিসরও বহুগুণে বেড়ে যায়।
তথ্য অনুসারে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কিছু প্রভাবশালী মহল এবং মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই সুযোগকে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করেন। বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হলেও মূল্য নির্ধারণ করা হতো অধিক হারে, ফলে রাষ্ট্রের বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হতো অনিয়মিতভাবে।
চুক্তির আওতায় থাকা ব্যবসায়ী গ্রুপটি পরে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স পায় এবং স্থাপন কাজ সম্পন্ন করে। অভিযোগ রয়েছে, বিনিময়ে নসরুল হামিদকে রাজধানীর ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন এলাকায় উপহার দেওয়া হয় ৪০ কাঠা জমি।
নসরুল হামিদের পিতা অধ্যাপক হামিদুর রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সংসদ সদস্য। পারিবারিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করে আসা এ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও তার কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.