
নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন সহিংস রূপ নেয় তারপর থেকেই সরকার কঠোর অবস্থানে। কারফিউ জারি এবং সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে সরকার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ব্লক রেইড করে দোষীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কয়েক হাজার ব্যক্তিকে সন্ত্রাস এবং নাশকতার অভিযোগে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি এবং জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতাও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপি হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। এ ভাবে তাদের ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ হবে-এটি তাদের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর হতাশাগ্রস্থ এবং ক্ষত বিক্ষত বিএনপি যখন নিজেরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, যখন নতুন করে সংগঠিত হওয়ার জন্য কিছু কিছু কর্মসূচি শুরু করেছিল ঠিক সেই সময়ে আবার বিএনপির ওপর গ্রেপ্তারের খড়গ নেমে এসেছে। ফলে বিএনপি এখন গুটিয়ে গেছে’।
বিএনপির নেতারা বলছেন যে, লন্ডন থেকে যে বার্তাই আসুক না কেন, বাঁচার জন্য তারা এখন কোনও রকমের কর্মসূচিতে যাওয়ার পক্ষপাতী নয়৷ বরং বিএনপি আসলে পরিস্থিতি দেখতে চাইছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গতকাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর নজর রাখার কথা বলা হয়েছে। বিএনপি মনে করছে যে শিক্ষার্থীরা এখন যেভাবে নিত্য নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে আছে তাতে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার মানুষ এবং সাধারণ মানুষ শিক্ষার্থীদের পক্ষে যাবে। এর ফলে আবার একটি আন্দোলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যাবে আপনা আপনি ভাবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের ব্যাপারে একটি নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি হচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন। বিএনপি এই সুযোগটাই নিতে চাইছে।
তারা মনে করছে যে আপাতত শিক্ষার্থীরা তাদের আবেদন চালিয়ে যাক এবং তার সঙ্গে শ্রেণি পেশার মানুষ যুক্ত। ইতোমধ্যে আজকে সাংস্কৃতিক কর্মীরা মাঠে নেমেছে। আইনজীবীরা আগেই কাজ শুরু করেছিল। সব কিছু মিলিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে একটি সরকার বিরুদ্ধে আবহ তৈরি হচ্ছে’।
ছাত্র, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, আইনজীবীদের মধ্যে এক ধরনের আন্দোলনের নতুন চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটিকে দেখার অপেক্ষায় আছে বিএনপি। অর্থাৎ এই আন্দোলনে এখন বিএনপি শুধুমাত্র দর্শক। তারা ‘বি টিম’। সুবিধামতো সময়ে তারা মাঠে নামবে। সরকারের বিরুদ্ধে এটিই তাদের এখন পরিকল্পনা।’
অন্যদিকে এই ঘটনায় জামায়াত ব্যাকফুটে চলে গেছে। জামায়াতের বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জামায়াতের রাজনীতি ও আনুষ্ঠানিক ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও জামায়াত হতবিহ্বল নয় এবং জামায়াত প্রতিক্রিয়াহীন। বরং জামায়াত নতুন কৌশল অবলম্বন করার পক্ষে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যে কোনও মূল্যে অব্যাহত রাখার জন্য জামায়াত এখনও নেটওয়ার্ক চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের একটি বড় ধরনের নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। সেই নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে জামায়াত এখন শিক্ষার্থীরা যেন করে, তাদের যেন টাকা পয়সার অভাব না হয় সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখছে জামায়াত। এখন জামায়াত ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে আন্দোলনের একটি জাতীয় আবহ সৃষ্টি করার জন্য তারা চেষ্টা করছে এবং এ লক্ষ্যে ছদ্মবেশী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। জামায়াত মনে করছে যে, সামনের দিনগুলোতে আন্দোলনের আরও নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।’