
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ‘ইমাম মাহদী’ দাবিকারী নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, লুটপাট ও কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশের গাড়িতে হামলা এবং লাশ পোড়ানোর ঘটনায় উসকানিদাতাদের শনাক্তে তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রাথমিক তদন্তে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাধিক নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ইতোমধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন, মো. মাসুদ মৃধা সহ-সভাপতি, উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ। মো. হিরু মৃধা সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। শাফিন সরদার বাসিন্দা, দেওয়ানপাড়া, গোয়ালন্দ পৌরসভা। এনামুল হক জনি বাসিন্দা, দেওয়ানপাড়া। কাজী অপু বাসিন্দা, কাজীপাড়া, ৭ নম্বর ওয়ার্ড ও হায়াত আলী বাসিন্দা, মৃধাডাঙ্গা, উজানচর ইউনিয়ন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতেই গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। যদিও নিহত রাসেল মোল্লা বা নুরাল পাগলার পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব বলেন, “পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর এবং সহিংসতার ঘটনায় গ্রেফতারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে আরও অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।”
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাকিবুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদেরও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।”
এদিকে, ঘটনার পর গোয়ালন্দে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং সহিংসতার প্রতিবাদে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।,
গোয়ালন্দ উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. জালাল উদ্দীন বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছিলাম, যার জন্য প্রশাসনের অনুমতি ছিল। কিন্তু একটি উসকানিমূলক গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে সমাবেশের ভেতর ঢুকে সহিংসতা ঘটিয়েছে, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং পরবর্তীতে যে ন্যক্কারজনকভাবে লাশ পুড়িয়েছে তা শুধু ইসলাম নয়, গোয়ালন্দবাসীর ভাবমূর্তিকে কলুষিত করেছে।”
জেলা জামায়াতের আমির মো. নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে জানান, “নুরাল পাগলার বিরুদ্ধে ইসলামবিরোধী নানা অভিযোগ ছিল। আমরা চেয়েছি শান্তিপূর্ণ সমাধান। কিন্তু একপক্ষ পরিকল্পিতভাবে কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করেছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার গোয়ালন্দে ‘ইমাম মাহদী’ দাবিদার নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায়। এ সময় তার এক অনুসারী রাসেল মোল্লা নিহত হন এবং আহত হন অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়, যা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে।
ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হামলায় উসকানিদাতা, পরিকল্পনাকারী এবং সহিংসতায় অংশগ্রহণকারীদের শনাক্তে কাজ করছে। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।,