
নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত গুমের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলায় সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, র্যাব ও পুলিশের সাবেক ২৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (৮ অক্টোবর) তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এই পরোয়ানা জারি করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, ডিজিএফআইয়ের পাঁচ সাবেক মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তা।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজিএফআইয়ের জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) ও র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটক রেখে ৩৪ জনকে গুম ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটানো হয়। এর মধ্যে টিএফআই সেলের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৭ জন এবং জেআইসি সেলের ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন তিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল, পাঁচ মেজর জেনারেল, ছয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, তিন কর্নেল এবং পাঁচ লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে ১১ জন এখনো সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসাইন তামিম। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আগামী ২২ অক্টোবর শুনানির জন্য হাজির করার নির্দেশ দেয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, আসামিরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নাম ব্যবহার করে মানুষকে গোপন স্থানে আটক, নির্যাতন ও গুমের মতো অপরাধে জড়িত ছিলেন। এই দায় কোনো বাহিনীর নয়, এটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত অপরাধ। তিনি জানান, গত এক যুগে দেশে সাড়ে তিন হাজারের বেশি গুমের অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে ৩৪৫ জন এখনো নিখোঁজ।
ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম, হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও মাইকেল চাকমা প্রমুখ। তাঁরা বলেন, বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় গুমের শিকার পরিবারগুলোর মধ্যে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা জেগেছে।
ট্রাইব্যুনালের আইনে অভিযুক্ত কেউ সরকারি পদে বহাল থাকতে পারবেন না। আদালত ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে।