অনলাইন ডেস্ক: গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েলের হামলা থেমে নেই। এসব হামলায় প্রতিদিনই প্রাণ যাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। সেই সঙ্গে মিসরের সঙ্গে গাজার সীমান্তের রাফা ক্রসিং বন্ধ করে উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহ সীমিত করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আইডিএফ। তারা জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। হামাস বলেছে, তাদের কাছে থাকা সব মরদেহ ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকিরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ায় খুঁজে বের করে ফেরত পাঠানো হবে।
গাজায় ভবনের ধ্বংসস্তূপে ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি চাপা পড়ে আছেন, যাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। এ অবস্থায় হামাস ইসরায়েলের কাছে মরদেহ ফেরত দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছে।
বৃহস্পতিবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, হামাস বলেছে– ধ্বংসাবশেষ থেকে বাকিদের উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ও উদ্ধার সরঞ্জাম ছাড়া তারা মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের আর কোনো দেহাবশেষ ফেরত দিতে পারবে না।,
এ বক্তব্যের পর শর্ত ভাঙার অভিযোগ তুলে গাজায় আবারও হামলা শুরু করার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। এর আগে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনটির এক নেতা বলেন, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক হামলা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে মরদেহ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
আল জাজিরা জানায়, গতকাল দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বানি সুহেইলা এলাকায় ইসরায়েল ড্রোন হামলা চালায়। এতে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন। এ ছাড়া মধ্যগাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর গুলিতে আরও একজন নিহত হন। গাজা সিটির এক বাসিন্দা দুদিন আগে আইডিএফের গুলিতে আহত হয়েছিলেন। গতকাল তিনি মারা গেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার বলেছেন, যদি হামাস শান্তিচুক্তি মানতে না চায়, তিনি ইসরায়েলকে গাজায় আবার অভিযান চালানোর অনুমতি দিতে পারেন। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘আমি বললেই ইসরায়েলি সেনারা আবার সড়কে নামবেন।’ ট্রাম্প এক সংক্ষিপ্ত ফোনালাপে বলেন, ‘হামাসের কারণে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার দ্রুত সমাধান হবে।’
সিএনএনের সঙ্গে ট্রাম্পের আলাপের পর জ্যেষ্ঠ দুই মার্কিন উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না যে হামাস মৃত জিম্মিদের সবার দেহ না দিয়ে চুক্তির শর্ত ভাঙছে। তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার মাধ্যমে হামাসের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেয়েছে– অবশিষ্ট মরদেহ উদ্ধার ও ফেরত দেওয়ার সব চেষ্টা করা হবে। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য ও লজিস্টিক সহায়তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও ওই মরদেহগুলো খুঁজছে। অনেক ক্ষেত্রে মরদেহ ভবন বা স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের নিচে থাকতে পারে।
যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে চলতি সপ্তাহের শুরুতেই ২০ জিম্মিকে মুক্ত করে হামাস। পরে দুই দফায় চার ও তিনটি মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে দুই জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনটি। এতে ২৮ মরদেহের মধ্যে ৯টি ফেরত পেয়েছে ইসরায়েল। গাজায় এখন ১৯ জিম্মির মরদেহ রয়ে গেছে। এগুলো হামাসের হাতে নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
রাফা ক্রসিং বন্ধ করে ত্রাণ সীমিত করল আইডিএফ
যুদ্ধবিরতির শর্তে গাজায় অবাধে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতির কথা থাকলেও রাফা ক্রসিং বন্ধ করে সরবরাহ সীমিত করেছে ইসরায়েল। গাজায় ২০ লাখের বেশি মানুষের প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হলেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৩০০ ট্রাক। আল জাজিরা জানায়, গাজার মানুষ তীব্র খাদ্য, পানি, ওষুধ ও আবাসন সংকটে আছেন। শিশুদের জন্য কিছুই নেই।,
বারগৌতির মুক্তি চাইলেন ব্রিটিশ এমপি
জিম্মি মুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল– ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি নেতা মারওয়ান বারগৌতিকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু প্রায় দুই হাজার বন্দিকে ইসরায়েল তাদের কারাগার থেকে মুক্তি দিলেও বারগৌতি এখনও খোলা আকাশের নিচে আসতে পারেননি। ফিলিস্তিনের ফাতাহ পার্টির এ নেতার মুক্তি চাইলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য এলি চউনস। গ্রিন পার্টির এ নেতা বলেন, ‘মারওয়ান বারগৌতি ফিলিস্তিনের ঐক্যের শক্তিশালী আওয়াজ। তিনি হয়তো ওই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারবেন।’
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.