
অনলাইন ডেস্ক: টানা ২২ মাস ধরে এক অবিরাম মৃত্যুর ছায়ায় দিন কাটাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। প্রতিদিন বাড়ছে লাশের সংখ্যা, আর সেই সঙ্গে বাড়ছে কবরের সংকট। হাসপাতালের করিডোর, স্কুলের বারান্দা, ধ্বংসস্তূপ, রাস্তাঘাট এমনকি বাড়ির উঠোন—সব জায়গাই যেন রূপ নিয়েছে অস্থায়ী মরদেহ রাখার স্থানে। গাজায় এখন কবর দেওয়ার মতো জায়গাও মিলছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি মানুষ। এখনও ধসে পড়া ভবনের নিচে অন্তত ১০ হাজার মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে জানানো হয়েছে।
তবে গত ৬ জুলাই প্রকাশিত একটি স্বাধীন জরিপে আরও ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। মেড-আর্কাইভে প্রকাশিত প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের তথ্যমতে, ১৫ মাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৮৪ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।
জরিপ অনুসারে, সহিংসতায় সরাসরি প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৭৫ হাজার ২০০ জন এবং অনাহারে মারা গেছেন আরও ৮ হাজার ৫৪০ জন। এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে সরাসরি সাক্ষাৎকার ও মাঠপর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে। কারণ, সরকারি হিসাবে কেবল হাসপাতালে পৌঁছানো লাশগুলোকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, জরিপে গাজা শহর, উত্তরের অঞ্চল ও রাফাহ অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি, কারণ সেখানে তখনও চলছিল ভয়াবহ হামলা ও জোরপূর্বক উচ্ছেদ। তবে ওই অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা জরিপে অংশ নিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছয় মাস আগে শেষ হওয়া এই জরিপ এখনো প্রাসঙ্গিক। কারণ, পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। শুধুমাত্র মার্চের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ৫০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি। মানবিক সহায়তা নিতে গিয়েও প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ।
জাতিসংঘের মুখপাত্র থামিন আল-খেতান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮৭৫ জন। গাজার সরকারি তথ্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর পানি বিতরণ কেন্দ্রগুলোতেও হামলায় নিহত হয়েছেন ৭০০ জনের বেশি।
অপরদিকে, গাজায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, প্রতি ১০ জন শিশুর একজন বর্তমানে অপুষ্টিতে ভুগছে।
ইতোমধ্যে গাজার উত্তরের অন্তত ১৬টি এলাকায় নতুন করে জোরপূর্বক উচ্ছেদের হুমকি দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। মঙ্গলবার ইসরাইলি বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, গাজা শহর ও জাবালিয়ার নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের দ্রুত দক্ষিণের আল-মাওয়াসির এলাকায় সরে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে, গাজা যুদ্ধ এবং অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কূটনৈতিক উদ্যোগও শুরু হয়েছে। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় ৩০টিরও বেশি দেশের কর্মকর্তারা দুই দিনের বৈঠকে মিলিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।