
অনলাইন ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় টানা ৩৬০ দিন ধরে ইসরায়েলের চলমান হামলা ও অবরোধ ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। শুধু বিমান ও স্থল হামলাই নয়, বরং খাদ্য সংকট তৈরি করে ত্রাণকেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
রুশ গণমাধ্যম আরটি-র বিশ্লেষণ বলছে, গাজায় ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থান ও জাতিসংঘ পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রেও বোমা হামলা চালাচ্ছে। বন্দুকধারী ভাড়াটে গোষ্ঠীর সহায়তায় খাদ্য সংগ্রহে আসা মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয় হওয়ার পর এসব হামলার মাত্রা বেড়েছে।
একদিকে ক্ষুধার্ত জনতার খাদ্য প্রাপ্তি বন্ধ করে দেওয়া, অন্যদিকে অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসেবা অকার্যকর করে তোলা—এ যেন সুপরিকল্পিত মানবিক বিপর্যয়। ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর জানিয়েছে, খাদ্য নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের মাথা ও বুকে গুলি করা হচ্ছে। শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করা হচ্ছে মায়ের কোলেই।
জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় সংস্থা ওসিএইচএ প্রধান জোনাথন হুইটল বলেন, “ক্ষুধাকে অস্ত্র বানিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।” জাতিসংঘ মহাসচিবও বিষয়টিকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
নরওয়ের চিকিৎসক ড. ম্যাডস গিলবার্ট গাজায় তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলেন, ইসরায়েল সরাসরি ও পরোক্ষভাবে অন্তত ৫ লাখের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ল্যানসেট-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা হতে পারে ১ লাখ ৮৬ হাজারেরও বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রাণকেন্দ্রগুলো বিশেষভাবে পরিকল্পিতভাবে সামরিক অঞ্চলের কাছাকাছি তৈরি করা হয়েছে, যাতে একবার ঢুকলে সহজে বের হওয়া না যায়। একাধিক সূত্র দাবি করেছে, এসব কেন্দ্র মূলত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
দ্য ক্র্যাডল-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গাজায় ত্রাণ ছিনতাইকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নেতা ইয়াসের আবু শাবাব ইসলামিক স্টেট (আইএস)-সংশ্লিষ্ট। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় তার দল হামলার আড়ালে ত্রাণ লুটপাট করছে। অথচ দায় চাপানো হচ্ছে হামাসের ওপর, যাতে করে যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত করা যায়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা ক্রেগ মোখিবার সরাসরি বলেন, “ইসরায়েলের বর্তমান নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত এবং তারা ইতিহাসে নাৎসিদের মতোই ঘৃণিত হয়ে থাকবে।”
ইসরায়েলের এই কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন। অথচ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এখনও জোরালো নয়। আন্তর্জাতিক নীরবতায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে গাজার শিশুসহ লাখো নিরীহ মানুষ।