
নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা: ৩১ দফার আলোকে সংস্কার’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের রাজনৈতিক দর্শনে ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মধ্যে বৃহত্তর পরিসরে একটি বিষয় নিয়ে আমাদের সবার মধ্যে আদর্শিক ঐকমত্য রয়েছে। এবং সেই বিষয়টি হলো, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।
তিনি বলেন, আমরা সবাই এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ চাই, যেখানে জনগণের অধিকার এবং স্বাধীনতা কোনোভাবেই কেড়ে নেয়া হবে না। আমরা একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশ চাই, যেখানে জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে এবং একটি নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার জনগণের মালিকানা ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে আমরা তথাকথিত ‘উন্নয়নের রাজনীতি’ দেখেছি, কিন্তু তার ভিত্তি ছিল দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়ন। বিএনপি যদি জনগণের ভোটে সরকার গঠন করে, তখন ৩১ দফার আলোকে আমরা জনগণের ক্ষমতায়ন এবং অংশীদারিত্বের রাজনীতি বাস্তবায়ন করবো। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হবে আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতা।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যদি আমরা একটি রুলস-বেসড রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তবে বিদেশি বিনিয়োগ ও প্রাইভেট ক্যাপিটাল সহজেই বাংলাদেশে আসবে। পাবলিক সেক্টরের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের উন্নয়ন এবং উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও, ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না।’
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রতিটি নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবে। যেভাবে বিএনপি সরকারের সময়ে মিডিয়া স্বাধীনভাবে সরকারের সমালোচনা করতে পারতো, সেভাবে আগামী দিনগুলোতেও গণমাধ্যমে মুক্তভাবে মতামত প্রকাশ করা যাবে। আমি নিশ্চিত, গত ১৬ বছরে যারা ফ্রিডম অফ স্পিচ, ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন ও ফ্রিডম অফ অ্যাসোসিয়েশন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের অধিকার আমরা ফিরিয়ে দিবো।”
তিনি আরো বলেন, আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেখানে ইউটিউব, ফেইসবুক বা অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজের মতামত প্রকাশ করার জন্য কাউকে হেনস্থা করা হবে না। সরকার সত্য গোপন বা মিথ্যা তথ্য প্রচারে বাধা দেবে না, তবে মিডিয়া থেকে নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।
তারেক রহমান জানান, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে, গত ১৬ বছরে তৈরি হওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কৃতি নির্মূল করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণা অনুযায়ী, আমরা নিশ্চিত করবো যে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা হবে।
তিনি আরো বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তন শুধুমাত্র এক দলের থেকে অন্য দলে ক্ষমতা হস্তান্তর নয়, বরং এটি একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা হওয়া উচিত, যা সমাজের পরিবর্তিত অবস্থা এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।’