নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির আইনজীবী ভবনের গণশৌচাগারে ব্যক্তিগত চেম্বার গড়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী যুবদলের দুই নেতা। তারা দুজনেই আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন।
বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মিত প্রস্রাবখানা দখল করেছেন তাদের একজন। বছর দুয়েক আগে সেখানেই তিনি গড়ে তুলেছেন ব্যক্তিগত ল চেম্বার। তার দেখাদেখি যুবদলের নেতা সম্প্রতি গণশৌচাগার ভেঙে চেম্বার বানিয়েছেন। কিন্তু চেম্বার শুরু করেননি। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি সমিতির নির্বাচনের পর পুরোদমে সেখানে চেম্বার করবেন বলে জানা গেছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কালের কণ্ঠ।
তাদের একজন মুনসুর আহম্মেদ। তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। অন্যজন হাফিজ আহমেদ বাবলু। তিনি বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক
সবকিছু ছাপিয়ে তারা বরিশাল আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে এখন বেশ পরিচিত। বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মিত গণশৌচাগারে তাদের ল চেম্বার নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে রয়েছে।'
জানা যায়, বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালত কম্পাউন্ডের উত্তর পাশে আইনজীবী সমিতির শতবর্ষী দ্বিতল ভবন। সমিতির এক হাজার ২৩৩ জন আইনজীবীর জন্য বসার জায়গা সংকুলান হচ্ছিল না। তাই পুরনো ভনের পেছনে সদস্যদের চেম্বারের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তারই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই শহীদ আ. রব সেরনিয়াবাত এনেক্স চারতলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। জেলা পরিষদের প্রায় চার কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ভবনের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পরই চারতলা ভবনে ১১৯টি কক্ষ সমিতির কার্যকরী পরিষদ ল চেম্বার হিসেবে আইনজীবীদের বরাদ্দ দেয়। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে বিশাল হলরুম। 'জেলা জজ আদালতের সব ধরনের অনুষ্ঠান এখানেই আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান ছাড়া এই হলরুমে সব সময় তিন শতাধিক আইনজীবী বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে মামলার বিষয় নিয়ে সলাপরামর্শ করেন। প্রত্যেক তলায় আইনজীবীদের জন্য শৌচাগার রয়েছে। তবে ভবনের শুধু নিচতলায় বিচারপ্রার্থীদের জন্য একটি গণশৌচাগার ও একটি প্রস্রাবখানা ছিল। ভবন উদ্বোধনের পর প্রায় তিন বছর প্রস্রাবখানা ও গণশৌচাগার বিচারপ্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল।
আইনজীবীরা বলছেন, সমিতির সদস্য আনোয়ার হোসেন মিজান শ্রমিকদের দিয়ে প্রস্রাবখানা ভেঙে ফেলেন। সেই কক্ষে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় তিনি ল চেম্বারের জন্য অবকাঠামোর উন্নয়ন করেন। পরবর্তী সময়ে সেখানে মেহেন্দীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুনসুর আহম্মেদ ল চেম্বার শুরু করেন।'
সমিতির তথ্য অনুযায়ী, মুনসুর আহম্মেদ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এক হাজার টাকা মাসিক ভাড়া হিসেবে সেই কক্ষটি ব্যবহার করছেন। জামানত হিসেবে সমিতিতে তিনি এক লাখ টাকা রেখেছেন।
মুনসুর আহম্মেদ ল চেম্বারের পাশের কক্ষটি বিচারপ্রার্থীরা গণশৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরে আদালতের অবকাশকালীন গণশৌচাগারের ভেতরের অবকাঠামো পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়। এবারও সেই আনোয়ার হোসেন মিজানের নেতৃত্বে শ্রমিকরা কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করেন। তখন প্রায়ই হাফিজ আহমেদ বাবলু কক্ষ সংস্কারের তদারকি করেছেন বলে একাধিক আইনজীবী কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। বাবলু আসছে সমিতির নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। তাই আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠাতব্য নির্বাচনের আগে ল চেম্বারে কার্যক্রম শুরু করেননি।'
গণশৌচাগারের অবকাঠামো পরিবর্তনের কথা স্বীকার করে আওয়ামীপন্থী আইনজীবী আনোয়ার হোসেন মিজান বলেন, ‘সমিতির অনুমতি নিয়ে আইনজীবী হাফিজ আহমেদ বাবলু ডিসেম্বরে ল চেম্বারের কাজ শুরু করি। তিনি দেশের বাইরে যখন ছিলেন, তখন বন্ধু হিসেবে আমি কাজের তদারকি করেছি।’
মুনসুর আহম্মেদের কক্ষের কাজের তদারকির কথা স্বীকার করে মিজান বলেন, ‘সমিতির ফান্ডে এক লাখ টাকা জমা দিয়েই ল চেম্বার করেছেন। সেই থেকে তিনি নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করে আসছেন।’
এ নিয়ে আইনজীবী মুনসুর আহম্মেদ বলেন, ‘আমি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রয়েছি। ল চেম্বারের বিষয় নিয়ে পরে কথা হবে।’
বিএনপিপন্থী আইনজীবী ইমন চাকলাদার বলেন, ‘সমিতির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে প্রস্রাবখানা সরিয়ে আওয়ামীপন্থী এক আইনজীবী ল চেম্বার করেছেন। আইনজীবী সমিতির সদ্যঃসাবেক কমিটির অনুমতি নিয়ে আরেক আইনজীবী ওই চেম্বারের পাশে থাকা গণশৌচাগার ভেঙে ল চেম্বার করেছেন। দুটি বিষয়ই নিন্দনীয়। এর প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন।’
বরিশাল আইনজীবী সমিতির সদ্যঃসাবেক সাধারণ সম্পাদক খান মোরশেদ বলেন,এনেক্স ভবনের নিচতলার গণশৌচাগার অপসারণ করে রাতের আঁধারে ল চেম্বার করা হয়েছে। সেখানে সমিতির কোনো অনুমতি ছিল না। কারণ বিচার প্রার্থীদের গণশৌচাগার আইনজীবীদের ল চেম্বার হতে পারে না। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একইভাবে প্রস্রাবখানাটি বেদখল হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সেটিও অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।’
বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মীর্জা মো. রিয়াজ হোসেন বলেন, ‘টয়লেটকে চেম্বারে রূপান্তর কিংবা কেউ নিয়ে তা ভাড়া দেবে সেটা হতে দেব না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’