
ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: বছর খানেক আগের কথা। উদ্ভট এক ভাবনা মাথায় এলো। আইডিয়াবাজ সহকর্মীকে বললাম, “আচ্ছা, রাষ্ট্রের সব অরগ্যান রাইটওয়েতে ফাংশন করলেই তো সুশাসন আসবে। এআই ব্যবহার করে সরকারের ইকোসিস্টেমটাই তো বদলানো যায়। আর এটা সহজেই করতে পারে গুগল, মাইক্রোসফটের মতো জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। তাহলে দেশ চালাতে রাজনৈতিক দলের দরকার কী।”
সহকর্মী হতবুদ্ধির মতো তাকালেন। বললেন, “নেতারা তো মানুষ, মানুষের স্বপ্ন, উন্নয়ন- এসব নিয়ে খেলেন।” বললাম, “হ্যাঁ, এই খেলাধুলাতেই তো তারা দানব, নিপীড়ক হয়ে ওঠেন।” সহকর্মী বললেন, “তাহলে আগে ভালো মানুষ বানাতে হবে।” বললাম, “ঠিক ধরেছেন। সবার আগে শিক্ষার সিস্টেমটা বদলে কাজটা শুরু করা যাবে।” আলাপে অন্য সহকর্মীরাও যোগ দিলেন। বললেন, “ভাই দারুণ আইডিয়া, অন্তত বাংলাদেশের জন্য। ”
প্রচলিত রাজনীতির ওপর চরম হতাশা থেকেই এমন আলোচনার সূত্রপাত। বললাম, “নেতাকর্মীদের ঢাউস মিছিল, জনসমাবেশ, বজ্রকণ্ঠের ভাষণ-এসবে আর দেশপ্রেম নেই। ক্ষমতার অংশীদারত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্র তথা ভোটারদের শোষণ, উন্নয়নের ব্যানারে লুটপাট, আতঙ্ক, সন্ত্রাস ছড়িয়ে দশকের পর দশক ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জটিল সিস্টেম তৈরি করে নিয়েছেন রাজনীতিকরা। যে সিস্টেম ভাঙার সাধ্য কারো নেই।
স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আবেগী আর সম্মোহনী ‘ন্যারেটিভের’ ফাঁদে ফেলেছে কোটি কোটি মানুষকে। যারা অতীতমুখী, স্বার্থপর নেতাদেরই ‘দেবতা’ মেনেছেন। তবে গত ৫ আগস্টের পর তরুণদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোয় প্রচলিত রাজনীতির ন্যারেটিভের ফাঁপা ‘মাহাত্ম’ সামনে এসেছে। ফলে তরুণদের আধুনিক, যুগপোযোগী, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির রাজনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন এখন সময়ের দাবি।
তবে সমস্যা হচ্ছে, তরুণদের নতুন ধারার রাজনীতির মূল্যবোধ ধারনে সক্ষম নয় ‘রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ’ গণমাধ্যম। কারণ গণমাধ্যমের ফাংশনার মডেলটাই বিগত শতকের। তরুণদের ভাষা তারা পড়তে পারে না। তারুণ্যের রাজনীতির ন্যারেটিভ তাদের কাছে দুর্বোধ্য। ফলে গাইড করার বদলে গণমাধ্যম হয়ে উঠতে পারে দাস অথবা বাধা। ভবিষ্যৎমুখী রাজনীতির বড় বিপদটা এখানেই।
নোট: শুধু আমজনতাই নয়, গণমাধ্যমকর্মীরাও গুজব আর আবেগধর্মী রাজনীতির দাসত্ব করে আসছে দশকের পর দশক ধরে। রাজনীতির নতুন আলোচনা তাদের জন্য অস্বস্তির, তাই সেসব এড়িয়ে চলা অথবা বাতিলের পথ বেছে নেবেন তারা। তবে তরুণ সংবাদকর্মীরা তেমনটা নয় নিশ্চয়ই।