
ডেস্ক রিপোর্ট: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, গণমাধ্যমের মালিক-সম্পাদকদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। জনগণের সামনে তাদের কৃতকর্ম প্রকাশ্যে আসা দরকার। বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) অডিটোরিয়ামে ‘গণমাধ্যমে জুলাই ও তারপর’ শীর্ষক প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভায় উপদেষ্টা এ কথা বলেন। পিআইবি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।,
মাহফুজ আলম বলেন, ‘নতুন মিডিয়া দেওয়া নিয়ে চরম হাহাকার দেখা যাচ্ছে। আমি যতদিন আছি, নতুন মিডিয়া দিয়ে যাব। পুরনো সেই আগের সেট অব ন্যারেটিভ ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সেই চেনা মুখগুলো আবার দেখছি। সবই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের সহযোদ্ধা ছাত্র ভাইয়েরা বলেন, মন্ত্রী হয়ে কেন অসহায়ত্ব প্রকাশ করি। আমরা যেটা করব, কোনোটা বন্ধ করিনি, করবও না। কিন্তু নতুন মিডিয়া থাকবে, পুরনোও থাকবে। কথার বিপরীতে কথা হবে, সমালোচনার বিপরীতে সমালোচনা হবে। আর যারা লড়াকু সাংবাদিকডা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
জুলাইয়ে সংবাদপত্রের কাজ কেমন ছিল তা নিয়ে গবেষণা করেছে পিআইবি। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা জুলাইয়ে টেলিভিশনগুলোর কাজ নিয়েও একটি গবেষণা করার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ মাহ্বুব উল্লাহ্ বলেন, ‘মবের কথা বলা হচ্ছে, মবেরও তো একটা সমাজতত্ত্ব আছে। মাও সেতুং -এর একটা কথা আছে, বিপ্লব কোনো ডিনার পার্টি নয়। জুলাইয়ে সে রকম কিছুই হয়নি, অনেক অনেক কম হয়েছে। সামনের দিনে কেউ আবারও ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠলে আবারও গণঅভ্যুত্থান হতে পারে।
মাহবুব উল্লাহ বলেন, সিকান্দার আবু জাফরের যে গান- ‘দিয়েছি তো রক্ত আরও দেব রক্ত’। প্রয়োজন হলে দেব এক নদী রক্ত। একইভাবে একদিকে একাত্তরে রক্ত দেওয়া হয়েছে, জুলাইয়ে রক্ত দেওয়া হয়েছে। আজ আমাদের নতুন বয়ান সৃষ্টি করতে হবে। একাত্তরের পুনর্মূল্যায়ন দরকার, সাতচল্লিশের পুনর্মূল্যায়ন দরকার। বারবার দেশভাগের কথা বলা হয়। দেশভাগ কথাটা আমাদের জন্য কতটা সম্মানের সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। দুটি স্বাধীন দেশের উদ্ভব হয়েছিল। দেশভাগ বললে আবার দেশ একত্রে করার প্রসঙ্গ এসে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ এখন। কেউ আর একত্রে ফিরে যেতে চায় না।,
মাহবুব উল্লাহ আরও বলেন, ‘জুলাইয়ে আমরা কী পেলাম প্রশ্ন উঠছে। এই যে, আমরা মুক্তভাবে কথা বলতে পারছি। জানি না, কতদিন আমরা তা পারব। এর বাইরে জুলাইয়ের পর আমরা কী পেলাম। অনেক কিছু ঘটছে। আমরা হয়তো এমন হোক, চাইনি। রুশ বিপ্লবের পর এর চেয়েও অনেক বেশি অরাজকতা হয়েছিল।’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চিন্তাবিদ ও লেখক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘সংবিধান তো বারবার সংশোধন হয়েছে। এখন নতুন একটা সংবিধান নিতে ভয় পাচ্ছেন। মনে হচ্ছে সংবিধান নতুন করে করলে দেশ বঙ্গোপসাগরে পড়ে যাবে।’
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘চব্বিশের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে নাকি বিপ্লব হয়েছে। পিআইবিও বিপ্লব বলছে না তাদের বইপুস্তকে। আমরা কি একাত্তরকে বিপ্লব বলি? কেউ মুক্তিযুদ্ধ, কেউ বলে স্বাধীনতা যুদ্ধ। জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশরা একদিনে এক হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে। জুলাইয়ের ৩৬ দিনে এর চেয়েও বেশি মানুষ প্রাণ দিল।’
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘জুলাইয়ের ঘটনাকে একসময় মৌলবাদীদের বিপ্লব বলে প্রচার করা হবে। অনেকে তালেবানের বিপ্লব বলছেন জুলাইকে। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রসবোধ কম নয়। তিনি বলেছেন, আমার তো দাড়ি নেই তালেবানের সরকার কীভাবে হলাম। পৃথিবীর অন্যসব বিপ্লবের পর অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আমাদের জুলাইয়ের পর তো অত হত্যা ঘটেনি। মব মব বলে যারা চিৎকার করছেন তারা আবার আমাকে হত্যাকারীকে উৎসাহিত করছি বইলেন না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গবেষক ও লেখক সাইমুম পারভেজ বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক কর্মীরা, দ্বিতীয় অবস্থানে হেনস্তা হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। সাংবাদিকরা ফ্যাসিস্টের পক্ষে লিখেছে, বলেছে এমন সংখ্যা যেমন আছে, আবার একটা বড় অংশ আছেন যারা তাদের পেশাগত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছেন এবং সেটি করতে গিয়ে নানা রকমের হামলা ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন পিআইবি পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরদৌস আজিম।,