নিজস্ব প্রতিবেদক: ইচ্ছাকৃত নয়—এমন বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত বাছাই কমিটির কাছে জমা পড়েছে ১ হাজার ২৫৩টি আবেদন। তবে পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও একটিও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এতে যেমন খেলাপি ঋণ কমছে না, তেমনি বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা।
গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা বা তদূর্ধ্ব শ্রেণীকৃত ঋণ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের বিশেষ বাছাই কমিটি গঠন করে। কমিটির কাজ—প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিত করে ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর কাছে সুপারিশ পাঠানো। এ পর্যন্ত জমা পড়া ১,২৫৩ আবেদনের মধ্যে মাত্র ৫৬টি আবেদন বাছাই করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংক চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেনি।
একজন আবেদনকারী ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘কমিটির বৈঠকে আমার আবেদন বাছাই হয়েছে। দুটি ব্যাংক উদ্যোগ নিলেও অন্য ব্যাংকগুলো কোনো সাড়া দিচ্ছে না। এতে এখনও খেলাপির তালিকায় রয়েছি।’
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনীহা, জটিল প্রক্রিয়া এবং গ্রাহক ও ব্যাংকের পারস্পরিক মতভেদ এই বিলম্বের প্রধান কারণ। কমিটির সদস্য ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ জানান, ‘প্রতিটি আবেদনের পেছনে আলাদা বাস্তবতা আছে। অনেক গ্রাহক ২০-৩০টি ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। সবার সম্মতি ছাড়া সিদ্ধান্ত কঠিন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও কমিটির আহ্বায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গভর্নরের সঙ্গে সভা করে সমস্যাগুলো জানিয়েছি। কিছু আবেদন বাছাই হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
কমিটির দায়িত্ব পুনর্গঠনের জন্য উপযুক্ত আবেদন বাছাই করে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পাঠানো। এরপর ব্যাংকের নিজস্ব পর্ষদে যাচাই-বাছাই শেষে পুনর্গঠন চূড়ান্ত করতে হবে।
২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেসব ঋণ শ্রেণীকৃত হয়েছে, সেসব ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ-বহির্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে নীতিসহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায়। তবে মাঠপর্যায়ে বাস্তবতা ভিন্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটিতে। দেশের বিতরণকৃত মোট ব্যাংক ঋণের ২৪.১৩ শতাংশই এখন খেলাপি।
এ অবস্থায় খেলাপি সমস্যা মোকাবেলায় গঠিত কমিটির কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এত বেশি আবেদন একটি কমিটির পক্ষে নিষ্পত্তি করা কঠিন। তাই নতুন কমিটি গঠন বা বিদ্যমান কাঠামোতে পরিবর্তন আনার চিন্তা চলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ না দিলে একদিকে খেলাপি ঋণ আদায়ে ধীরগতি তৈরি হবে, অন্যদিকে উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি খাতও সংকটে পড়বে। তাই দ্রুত, স্বচ্ছ ও কার্যকর নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.