
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা—যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
মাত্র তিন মাসে (ডিসেম্বর-মার্চ) এই ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। আর গত এক বছরে (২০২৪ সালের মার্চে ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা—যা দ্বিগুণেরও বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নিয়মনীতি বাস্তবায়নের ফলে এতদিন কাগজে-কলমে ‘ভালো’ দেখানো হলেও আসলে অনাদায়ী থাকা বহু ঋণ এখন খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত হচ্ছে। এতে ব্যাংক খাতের প্রকৃত ঝুঁচপূর্ণ অবস্থা দৃশ্যমান হলেও এটি আর্থিক খাতের জন্য অস্বস্তিকর বার্তা।
তারা আরও বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাবে বিতরণকৃত বহু ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় তা এখন মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ৪৫ শতাংশ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
আইএমএফ-এর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। কিন্তু বর্তমান চিত্র এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, এরপর থেকেই নানা সুবিধার সুযোগে ব্যাংক খাতে অবাধ লুটপাট ও অর্থপাচারের মাধ্যমে ঋণখেলাপি সংস্কৃতি বিস্তৃত হয়েছে।
খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে না পারলে দেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করছেন অর্থনীতিবিদরা।