
নিজস্ব প্রতিবেদক: দিনভর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী স্লোগান এবং দিন শেষে দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিকাল ৩টায় সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন কোটা আন্দোলনকারীরা। এর ফলে কোটা বিরোধী আন্দোলন একটি নতুন মাত্রা লাভ করলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে এখন দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার একটি সুষ্পষ্ট পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সোমবার (১৫ জুলাই’) রাতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাবি শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন।
এর আগে গতকাল রাত থেকে হঠাৎ করে অন্য দিকে মোড় নিয়েছে কোটা বিরোধী আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হঠাৎ মধ্যরাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। যা এই কোটা আন্দোলনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আজও দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের স্লোগান অব্যাহত ছিলো। বিকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। সবকিছু মিলিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন অনেকটা সহিংস হয়ে উঠেছে বলা বাহুল্য হবে না। ফলে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে যে, কোটা আন্দোলন এখন কোন দিকে মোড় নিচ্ছে’?
গতকাল মধ্যরাত থেকে আজকে সারা দিন কোটা আন্দোলনের ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে যে, কোটা আন্দোলন এখন স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক আবহ লাভ করেছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী দ্বারা এই আন্দোলন পরিচালনা করছে। এটি এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয় বলেই সারা দিনের ঘটনা প্রবাহ সাক্ষাৎ দিচ্ছে। গতকাল আগ পর্যন্ত কোটা বিরোধী আন্দোলন ছিলো শান্তিপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছে, বিক্ষোভ মিছিল করেছে, সর্বশেষ গতকাল তারা রাষ্ট্রপতির বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এই পুরো বিষয়টি ছিলো অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, এমনকি গতকাল পুলিশের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির বরাবার স্মারকলিপি দিয়েছেন। কিন্তু আজ হঠাৎ আন্দোলনের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে।’
উল্লেখ্য যে, গতকাল এক সংবাদ সন্মেলনে কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন বিষয় উল্লেখ্য করে তিনি বলেছেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আমার দাঁড়ানোর কোনো অধিকার নেই। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের আদালতে যাওয়ারও পরামর্শ দেন। তিনি বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগ সম্পর্কে যেমন সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন তেমনি যারা মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করছেন সে ব্যাপারে সোচ্চার কণ্ঠে বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্যকে একটি বিশেষ মহল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুলভাবে উপস্থাপন করে সারা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। ফলে মধ্যরাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উত্তাল হয়ে উঠে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হয়ে অবস্থান নেন রাজপথে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে বিভিন্ন ক্যাম্পাস। ফলে কোটা বিরোধী আন্দোলন তার চরিত্র হারায়। এখন এই কোটা বিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয় সেটা দেখার বিষয়।’