
কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অটো রিকশাচালক তাফরুল ইসলাম সৈকত (১৯) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা রিফাত (২৮) কে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আটক করা হয়েছে। বুধবার (১৬ জুলাই) রাতে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী স্থানীয়দের সহায়তায় নাঙ্গলিয়া খাল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো ধামাটি উদ্ধার করা হয়েছে। রিফাত একই ইউনিয়নের আতাকরা ভূঁইয়া বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে এবং চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার পূর্ব চাঁন্দিশকরা ওয়াপদা রোডের একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া। পেশায় তিনিও একজন অটোচালক।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হিলাল উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গত ৩ জুলাই বিকেলে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া এলাকার নাঙ্গলিয়া খালপাড়ে লক্ষ্মীপুর সেতুর নিচ থেকে এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে নিহতের বাবা মো. খায়রুল ইসলাম তার ছেলেকে শনাক্ত করেন।
ভিকটিম তাফরুল ইসলাম সৈকত পরিবারসহ পৌরসভার ইউনুছ মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রতিবেশী রিফাতের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল এবং তারা মাঝে মাঝে মাদক সেবনে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছে রিফাত।
পুলিশ আরও জানায়, সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া এবং ব্যক্তিগত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় রিফাত এক পর্যায়ে অটোরিকশা ছিনিয়ে বিক্রি করে দেনা শোধের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২ জুলাই রাত ১১টার দিকে রিফাত সৈকতকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে নাঙ্গলিয়া খালপাড়ে নিয়ে যায়।
সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর অন্য সহযোগীরা না আসায় একাই খালের পাশে লুকিয়ে রাখা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সৈকতের ঘাড়ে কোপ দেয় রিফাত। পরে উপর্যুপরি আঘাতে সৈকতকে হত্যা করে তার মোবাইল, নগদ টাকা এবং অটোরিকশার চাবি নিয়ে মরদেহ খালে ফেলে দেয় এবং অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
মামলাটি তদন্ত করেন এসআই মুরাদ হোসেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের মোবাইল আসামির হেফাজতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বুধবার ভোরে রিফাতকে গ্রেফতার করা হয়।
পরদিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রিফাত হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ বিবরণ দেয়। তার দুই সহযোগীর বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং তাদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে পুলিশ।
মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনকে কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি বড় সফলতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ।