অনলাইন ডেস্ক: ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটননগরী পাহেলগামে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে উপমহাদেশে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল), স্থানীয় সময় তিনটার দিকে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। হামলায় নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন ভ্রমণকারী পর্যটক, যাদের মধ্যে একজন বিদেশিও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এই হামলাকে ২০১৯ সালের পর কাশ্মীরের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা পাহেলগামের জনপ্রিয় এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালায়।
হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। তাদের দাবি, কাশ্মীরে ৮৫ হাজার বহিরাগতের ‘অবৈধ বসতি’ প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
ভারতের পুলিশ এ ঘটনার জন্য ‘ভারতীয় শাসন-বিরোধী সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করছে। দেশটির সাবেক সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সরাসরি পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাদের দাবি, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মদদেই এই হামলা সংগঠিত হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিক্রিয়া জরুরি।'
এ ধরনের উত্তেজনা নতুন নয়। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও বিমান হামলা করে এবং একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। সেই সময়কার উত্তেজনাও সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।
কাশ্মীরে স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে আনা হয় অঞ্চলটিকে। এতে করে বহিরাগতদের জমি কেনা ও চাকরি পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, পর্যটন খাতে আসে নতুন গতি। তবে এতে চরমভাবে খারাপ হয় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক।
বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনীরের কাশ্মীর নিয়ে দেওয়া বক্তব্য এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশ সফরের সময় হামলা চালানো-এ সবই ‘আন্তর্জাতিক মনোযোগ কাড়ার কৌশল’ হতে পারে।
ভারতের অভ্যন্তরেও রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জনমনে ক্ষোভ ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কিছুদিনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হিন্দু তীর্থযাত্রাকে সামনে রেখে কাশ্মীরে আরও হামলার শঙ্কা করা হচ্ছে।'
দ্য ইকোনমিস্ট এর মতে, কাশ্মীরকে ঘিরে আবারও সংঘাতের ছায়া ঘনাচ্ছে। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শান্তি আলোচনার পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকেও মোড় নিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।
সাম্প্রতিক হামলা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা এক বিস্ফোরক দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ-যার পেছনে আছে ইতিহাস, ভূরাজনীতি, এবং দুই দেশের জাতীয়তাবাদী আবেগ।'