
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাধন চন্দ্র মজুমদার, হাসানুল হক ইনু, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, সালমান এফ রহমান, এ বি এম তাজুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেনসহ ৫০ জন ভিআইপি বন্দির ঠিকানা এখন ঢাকার কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ‘বিশেষ কারাগার’। কারাগার হলেও এর পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য সাধারণ কারাগার থেকে অনেকটাই ভিন্ন।
এই কারাগারে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার—গল্প-উপন্যাস থেকে মনীষীদের জীবনী, ইসলামি ও আইনের বই পর্যন্ত সবই মিলছে সেখানে। কারা সূত্র জানায়, আইনপেশা সংশ্লিষ্ট আনিসুল হক ও কামরুল ইসলাম পড়ছেন আইনের বই। অন্যদিকে ইনু ও শাজাহান খান মনোযোগ দিয়েছেন জীবনীগ্রন্থে। আবার কেউ কেউ খালি গলায় গান গেয়েও সময় কাটাচ্ছেন।
প্রত্যেকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা দিয়ে বই নিচ্ছেন। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিরা পাচ্ছেন দুটি করে দৈনিক পত্রিকাও। ইসলামী বইয়ের প্রতি আগ্রহও রয়েছে অনেকের।
কারাগার সূত্র জানায়, এই বিশেষ কারাগার চালু হয় ২১ জুন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে, পূর্বে মহিলা কারাগারের জন্য নির্মিত ভবনেই গড়ে তোলা হয় ২৫০ জন ভিআইপি বন্দির জন্য এই কেন্দ্র। প্রথম পর্যায়ে ৫০ জনকে এই কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮০ জন দুর্ধর্ষ বন্দিকেও রাখা হয়েছে এখানে। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও আনা হবে।
কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দিদের একাধিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তাঁদের একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ আছে, রয়েছে প্লেগ্রাউন্ড ও হাঁটার ব্যবস্থা। মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুরোধ থাকলেও তা অনুমোদন পায়নি। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা—সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ও বুথ নির্ধারিত হয় আগেই।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অনন্য। সব কারারক্ষী বডিক্যামেরা ব্যবহার করছেন, যার মাধ্যমে বন্দিদের সঙ্গে প্রতিটি কথোপকথন অডিও-ভিডিও আকারে সংরক্ষিত হচ্ছে। সামান্য দায়িত্বে অবহেলাতেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বদলি করা হয়েছে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন জানান, এই কারাগারে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ যেন গাফিলতি না করেন, সেজন্য কঠোর মনিটরিং চলছে।
বর্তমানে বন্দিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জুনায়েদ আহমেদ পলক, দীপঙ্কর তালুকদার, আরিফ খান জয়, ফজলে করীম চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সচিব কামাল নাসের চৌধুরী, সাবেক এমপি শাজাহান ওমরসহ অনেকেই।
সহকারী কারা মহাপরিদর্শক জান্নাতুল ফরহাদ জানান, এখানে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে বাছাইকৃত, সুনামধন্য ও দক্ষ কর্মী। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। পুরো কারাগারটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায়।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন হওয়া মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারটি অবশেষে বিশেষ কারাগার হিসেবে চালু হয় ২০২৫ সালে। নারীকর্মী সংকটের কারণে মহিলা বন্দিদের না এনে এটি ভিআইপি কারাগারে রূপান্তর করা হয়েছে।
এই কারাগার আধুনিক সিসিটিভি, এআই নির্ভর নজরদারি, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পাঠাগার, হাসপাতালসহ বহু সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে—যা দেশের কারা ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।