
নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ গোপনে ৩লাখ টাকায় মীমাংসা করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মুসলিম ধর্মের মেয়েকে হিন্দু ধর্মের ছেলে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করার সত্যতা পেয়ে বিএনপি নেতারা টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় ওই হিন্দু যুবক পলাতক রয়েছে।
ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম পবিত্র শীল (২১)। তিনি কামারখন্দ উপজেলার পার পাইকোশা মুচিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা।
জানা যায়, এ বিষয়ে আইনি সহায়তা নিতে বাধা দিয়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করেন ঝাঐল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল এবং ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন।
ভুক্তভোগী তরুণী জানান, মোবাইল ফোনে ইসলাম ধর্মের পরিচয়ে প্রেম হয়। এরই জেরে গত রবিবার (১জুন) বেলকুচি মডেল ডিগ্রি কলেজে ক্লাশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দেখা করে পাইকোশা পবিত্রর একটি বাড়ীতে নিয়ে যায়। লোকজন না থাকায় জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে পবিত্রর মা ও তাঁদের পরিবারের লোকজন জানতে পেরে ঢাকায় তাঁর মামার বাসায় এক হাজার টাকা হাতে দিয়ে পবিত্রর মামায় বাসায় আমাকে জোর করে নিয়ে যায়। তারপরের দিনে পবিত্রর বাবা মা ঢাকায় গিয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বলে এবং বিভিন্ন লোভ দেখায়। পরিবারের খোঁজ ও আমার কান্নাকাটিতে পবিত্র ৯দিন পর রাতে সিএনজি যোগে বাড়ীতে আসার পূর্বে পাইকোশা ব্রিজের উপর থেকে ঝাঐল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মল্লিকা ও উজ্জল, বিএনপি নেতা রুহুল আমিন ও সাবেক আব্দুল আওয়াল সুষ্ঠু বিচারের কথা বলে পবিত্রকে পালিয়ে যাওয়ার সহযোগিতা করে। পরে রুহুল আমিনের বাসায় নিয়ে খুব খারাপ ভাষায় কথা বলে ও একটি ঘরে বেঁধে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে রুহুল আমিন ও বিএনপি নেতা আওয়াল আমাকে ও আমার পরিবার নিয়ে নানান ভয়ভীতি ও খারাপ ভাষায় কথা বলতে থাকে। পরে ওই বন্ধ ঘর থেকে অনেক কষ্টে বের হয়ে কান্নাকাটির শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আমার পরিবারকে জানায়। খবর পেয়ে ওই দিন রাতে পবিত্রকে হাজির না করে আমাকে উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দিলে আমরা চলে আসি। কিন্তুু বিচার না দিয়ে ঘটনার ৮দির পার হলেও সময় ক্ষেপন করে ওই এলাকার বিএনপি নেতারা টাকা পয়সা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানতে পারছি।
ভুক্তভোগীর সুমির মা সোনেকা বেগম বলেন, নেতাকর্মীরা ৩লাখ টাকা নিয়ে এখন বিষয়টি ধামাচাপা দিচ্ছে। গত বুধবার ওই ছেলের পরিবারের কাছ থেকে বিএনপি নেতা রুহুল আমিন, আলামিন ও রোকন ২০হাজার টাকা নিয়ে আমাদের দেবার কথা বলে বাড়ির আশেপাশে লোকজনের কাছে নানান মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গেছে। এখন এই লজ্জায় আমরা বাড়ী থেকে বের হতে পারছি না।
সুমীর বাবা জহুরুল ইসলাম বলেন, একজন হিন্দুু পরিবারের ছেলে মুসলিম ধর্মের মেয়েকে নির্যাতন করার অপরাধে বিচার চেয়ে বিচার পাচ্ছি না। এখন লোকেমুখে শুনছি বিচারের আশ্বাস দিয়ে তাঁরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। মেয়ে অসুস্থ ও বিএনপি নেতারা নানান ভয়ভীতি করায় কোথাও যেতে পারছি না।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীরা বলেন, নানা অপকর্মে অভিযুক্ত স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা এই লোমহর্ষক ধর্ষনের বিষয়টি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মেয়ের পরিবারকে নানান হুমকি দিয়ে আসছে। হিন্দু ছেলে ও তাঁদের পরিবারের অপকর্ম ঢাকতে গোপনে অর্থ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কথা বলে ছেলের পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি গত বুধবারেও ওই হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে আপাতত বিশ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এর আগেও ওই ছেলের কাকা সুশীল একজন মুসলিম পরিবারের মেয়েকে ধর্ষণ করার অপরাধে মামলা হয়েছিল তখন ওই বিষয়টিতেও এই বিএনপি নেতাকর্মীরাই মিমাংসা করে দুই লাখ টাকায় দফারফা করেছে। এছাড়া ওই হিন্দু যুবক পবিত্রর কাকাতো ভাই দুলু বাড়ীর পাশে একজন মুসলিম মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা সময় ধরা পড়ে। সে সময়ও তাঁদের বাঁচিয়ে দেয় বিএনপি নেতা আব্দুল আওয়াল ও রুহুল আমিন। তাঁদের ও অন্যের অপকর্মে ঢাকতে গোপনে মিমাংসা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তাঁদের অন্যতম উদ্দেশ্যে বলে অভিযোগও তোলেন স্থানীয়রা।
বিচারে অর্থনৈতিক লেনদেন ও ধামাচাপার বিষয়টি অস্বীকার করে ঝাঐল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল বলেন, এ ঘটনায় মেয়ের পরিবারের ৭/৮ জন এসেছিল। তাঁদের কাছে মেয়েকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরপর কি হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে তিনি জানান।
পবিত্র শীলের মা দুলালী রানী জানান, ছেলে ও অন্যদের জরিমানা দিতে দিতে আর এগুতে পারছি না। এ ঘটনায় মেয়েকে বিয়ে দেওয়া তিন আনি সোনার কানের দুল বিক্রি করেছি ও গ্রামের আবুল হোসেনের কাছ থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে ষাট হাজার টাকা সর্বমোট ১লাখ টাকা ওই ছেলের পরিবারকে দেওয়ার জন্য ভাতিজা দুলুর কাছে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ায় পরিবারের প্রধান দুলু বিএনপি নেতাদের কাছে টাকা দেবার বিষয়ে বলেন, প্রথমে বিএনপি নেতারা তিন লাখ টাকা চেয়েছে এবং খুব দ্রুত সব ঝামেলা শেষ করে দিবে। কিন্তুু আমরা এক লাখ টাকা গুছিয়ে রেখেছি। এছাড়া আমাদের ওয়ার্ডের মল্লিকা ও উজ্জল মেম্বর সার্বিক সহযোগিতা করছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ জানান, এ ব্যাপারে থানায় কেউ কিছু জানায়নি। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।