অনলাইন ডেস্ক: ইরাক ও কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ‘অ্যানাউন্সমেন্ট অব ভিক্টরি’ নামে চালানো এ হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু স্থাপনায় আঘাতের পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তেহরান। ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) জানিয়েছে, এ হামলা ভ্রাতৃপ্রতিম কাতার বা দেশটির জনগণের বিরুদ্ধে নয়, বরং আবাসিক এলাকা থেকে দূরের মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করেই পরিচালিত হয়েছে।
কাতারের রাজধানী দোহার আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিসহ ইরাকের বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পরপরই মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ৮টি দেশ—কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, জর্ডান, সিরিয়া ও লেবানন—তাদের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। এতে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিজ নিজ এয়ারলাইনস অফিসে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একে কাতারের সার্বভৌমত্ব ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে। তাদের দাবি, সফল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।
রয়টার্স ও নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, হামলার আগে ইরান কূটনৈতিক চ্যানেলে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারকে আগাম সতর্ক করে। উদ্দেশ্য ছিল প্রাণহানি এড়ানো। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের তথ্যানুযায়ী, আল-উদেইদ ঘাঁটিতে ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, যার মধ্যে ১৩টি ভূপাতিত এবং একটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কোনো আমেরিকান হতাহত হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের এ হামলাকে ‘দুর্বল প্রতিক্রিয়া’ বলে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি আগাম সতর্কবার্তা দেয়ায় ইরানকে ধন্যবাদও জানান।
এদিকে, ইরাকের হামলার বিষয়ে ইরান এখনও স্পষ্ট কোনো অবস্থান নেয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, হামলা সরাসরি ইরান না করে তাদের ঘনিষ্ঠ কোনো প্রক্সি গোষ্ঠী চালিয়ে থাকতে পারে।
বিশ্ববাজারে এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। হরমুজ প্রণালির জাহাজ চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে জ্বালানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে এবং বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে পারে এলএনজি আমদানিতে।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) জানায়, চলতি অর্থবছরে কাতার গ্যাস থেকে ৪০টি এলএনজি কার্গো আমদানির পরিকল্পনার মধ্যে ৩৪টি ইতোমধ্যে এসেছে। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনায় বাকি সরবরাহ অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে।
ঢাকা-কাতার রুটে প্রতিদিনের ফ্লাইট ইতোমধ্যে ব্যাহত হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিবর্তিত রুটে চলেছে বা মাঝপথে ফিরে এসেছে। কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাতারে গ্যাস আমদানির ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা যত বেশি, সংকট দীর্ঘ হলে তত বেশি প্রভাব পড়বে দেশীয় জ্বালানি সরবরাহে। ফলে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.