
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধের জেরে কম্বোডিয়ায় বোমা হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ডের বিমান বাহিনী। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দেশটির একটি সড়কে দুটি বোমা ফেলে থাই এয়ারফোর্সের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। এতে থাইল্যান্ডে অন্তত ১২ জন নিহত এবং ৩১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্যাংকক সরকার।
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সমসাক থেপসুথিন জানান, নিহতদের মধ্যে এক শিশুসহ ১১ জনই বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সেনাসদস্য। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ২৪ জন বেসামরিক এবং সাতজন সেনা সদস্য।
সংঘাত শুরুর পর দুই দেশই সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। ব্যাংকক সরকার জানিয়েছে, প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সীমান্তও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে শত বছরের পুরোনো সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। সংঘর্ষপ্রবণ অঞ্চলটি ‘এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত, যেখানে ১১ শতকের একটি মন্দির নিয়ে ২০০৮ সালে থেকে উত্তেজনা চলছে।
বৃহস্পতিবার সেই অঞ্চলের কাছেই ‘তা মোয়ান থম’ মন্দিরের কাছে প্রথম গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষই সংঘাত শুরু হওয়ার জন্য একে অপরকে দায়ী করছে।
থাই সেনাবাহিনীর অভিযোগ, কম্বোডিয়া নজরদারির জন্য ড্রোন মোতায়েন করায় তাদের বাহিনীর ওপর হামলা হয়। অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার দাবি, চুক্তি লঙ্ঘন করে থাই সেনারা তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং একটি সামরিক স্থাপনার দিকে অগ্রসর হয়।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের একটি যুদ্ধবিমান তাদের ভূখণ্ডে দুটি বোমা ফেলে। থাই সেনা কর্মকর্তা রিচা সুকসুওয়ানন রয়টার্সকে জানান, একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা চালানো হয়।
গত মে মাসে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকেই সীমান্তে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দেশই সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে। এমনকি সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে থাই বাহিনীর এক সদস্য আহত হন।
সংঘাত শুরুর পর থাইল্যান্ড তাদের রাষ্ট্রদূতকে কম্বোডিয়া থেকে ফিরিয়ে নেয় এবং দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের হুমকি দেয়, যা উত্তেজনা আরও বাড়ায়।
এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন আসিয়ান জোটের বর্তমান সভাপতি ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বললেও থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত পরস্পরের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হুন মানেত বলেন, “শান্তি চাই, তবে সামরিক আগ্রাসনের জবাব সামরিকভাবেই দিতে হবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের কূটনৈতিক উত্তেজনা ও সামরিক অগ্রাসন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে।