কমে গেল কাদেরের দাপট?

নিজস্ব প্রতিবেদক: ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমন একজন নেতা যিনি ওবায়দুল কাদেরের এই সিদ্ধান্ত মানেননি। সিদ্ধান্ত না মেনে তিনি ধানমণ্ডি ৩ নম্বর কার্যালয়ে গিয়ে ওবায়দুল কাদেরের তোপের মুখে পড়েন। ওবায়দুল কাদের তাকে বলেন, আপনি তো দলের কোন সিদ্ধান্তই মানেন না। কিন্তু তার পরও শাজাহান খান তার ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে রাখেন এবং দলের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন আশঙ্কার মধ্যেই তিনি উপজেলা নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগ সভাপতির সংবাদ সম্মেলনের পর দেখা গেল যে, ওবায়দুল কাদের যা বলেছেন এবং আওয়ামী লীগের যে সিদ্ধান্ত তার মধ্যে দুস্তর ফারাক রয়েছে। ওবায়দুল কাদের যেভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন বাস্তবতা তা নয়। ওবায়দুল কাদের যত গর্জেছেন বাস্তবে আওয়ামী লীগ তত বর্ষেনি। আর একারণেই এখন ওবায়দুল কাদেরের কর্তৃত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

এমনিতেই আওয়ামী লীগে বেশ কিছুদিন ধরে এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির বাইরে অন্য কোন নেতার কথা তৃণমূলের আওয়ামী লীগ বা মাঠ পর্যায়ের নেতারা মোটেও কর্ণপাত করেন না। তাদেরকে খুব একটা আমলে নেন না। তারপরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে কথা। তিনি দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি। সেই ক্ষমতাবান ব্যক্তি যখন বলছেন, সকলে ধরে নিয়েছিল যে, এটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং ওবায়দুল কাদের এটিকে শেখ হাসিনার নির্দেশনা বলেই অভিহিত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার পরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা একরামুল করিম চৌধুরী, শাজাহান খান এবং ড. রাজ্জাকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন এবং তাদের স্বজনদেরকে প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই তিনজনের কেউই ওবায়দুল কাদেরের কথায় কর্ণপাত করেননি।

ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা অমান্য করে তারা প্রার্থী হওয়ার পর এখন দেখা গেল যে, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের অবস্থানই এখন আর সঠিক নেই। ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। অথচ ওবায়দুল কাদের একাধিক গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে, ৩০ এপ্রিল যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনাই হয়নি। তাহলে কী ওবায়দুল কাদের বাড়িয়ে বলেছেন?

কেউ কেউ দাবি করেন, যেহেতু একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন সেহেতু ওবায়দুল কাদের বিষয়টিকে বড় করে দেখেছেন এবং তিনি নিজেই উপজেলা নির্বাচনের বিষয় নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। কারণ তার নির্বাচনী এলাকায় যদি একরামুল করিমের সন্তানও উপজেলা চেয়ারম্যান হয় তাহলে তার এলাকায় আধিপত্য কমে যাবে। আর একারণেই হয়তো তিনি বিষয়টিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।

আজ আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্য থেকে স্পষ্টতই মনে হয় যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতারা এই বিষয় নিয়ে গর্জে ছিলেন বাস্তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিষয়টিকে অতটুকু গুরুত্বতর মনে করেন না। বরং তার প্রধান আগ্রহের ব্যাপার হলো উপজেলা নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। আর এ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা সবসময় যা বলেন সেটিরই পুনঃউচ্চারণ করেন এই বক্তব্যটি ঠিক না। শেখ হাসিনা আত্নীয় স্বজনদের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থানের সঙ্গে পুরোপুরি একই রকম বক্তব্য রাখেননি। আর এর ফলে ভবিষ্যতে ওবায়দুল কাদেরের হুশিয়ারি বা নির্দেশনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কতটুকু শুনবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে প্রশ্ন করেছেন তাহলে কী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দাপট কমে গেল?

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

সবজির বাজার লাগামহীন

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: বেগুনের দাম ছুঁয়েছে ব্রয়লার মুরগিকে। পেঁপে ছাড়া কোনো সবজি ৮০ টাকার নিচে নেই। ঢাকার বাজারে চোখে পড়েনি বড় ইলিশ। রোববার (৬

আসামির কাছে টাকা চাওয়ার অডিও ফাঁস, ছাত্রদল নেতাকে অব্যাহতি

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: টাকার বিনিময়ে মামলার অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে- আসামির সঙ্গে এমন ফোনালাপের অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর রাজশাহীর এক ছাত্রদল

শাহজাদপুরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক বৃদ্ধ নিহত

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। জানাগেছে,উপজেলার রুপবাটি ইউনিয়নের বড় ধনাইল গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত

মাদ্রাসা-কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বেও ডিসি-ইউএনওরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সব বেসরকারি স্কুল-কলেজের সভাপতিদের অপসারণের পর বেসরকারি মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতিদেরও অপসারণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের

চলন্ত বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি, ডিবির জ্বালে আরও দুই আসামি-মালামাল উদ্ধার

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানির মামলায় টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি)

সিরাজগঞ্জে ৫৭ কেজি গাঁজাসহ ৩জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে র‍্যাব-১২ সদর কোম্পানি ও র‍্যাব-১২’র যৌথ অভিযানে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা এলাকা হতে ৫৭ কেজি গাঁজাসহ ৩জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার ও ১টি