নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক উত্তাপ এবার ছড়াল কবরস্থানেও! পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) গ্রামের মানুষের ব্যবহৃত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থানের সভাপতি নির্ধারণে প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে সরাসরি ভোট। এতে প্রার্থী হয়েছেন দুই রাজনৈতিক দলের নেতা-যুবদলের উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস (ছাতা) এবং শ্রমিক দলের ইউনিয়ন সভাপতি শরিফুল ইসলাম (চেয়ার)।
এই নির্বাচন ঘিরে এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। স্থানীয়রা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনেও এমন আমেজ দেখা যায় না অনেক সময়। পোস্টার লাগানো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট ও দোয়া চাওয়া, চায়ের দোকানে আপ্যায়ন, এমনকি বিড়ি-সিগারেট খাওয়ানোর ঘটনাও ঘটছে! ভোটারদের মন জয় করতে দুই প্রার্থীর প্রতিশ্রুতির তালিকায় রয়েছে কবরস্থান ঘিরে উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা।
নির্বাচন কমিশন ও তফসিল ঘোষণা
কবরস্থান পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় এলাকাবাসী। তবে সভাপতির পদ নিয়ে সৃষ্টি হয় মতবিরোধ ও উত্তেজনা। বিষয়টি গড়ায় থানা পর্যন্ত। পরে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলমের পরামর্শে সিদ্ধান্ত হয়-ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্ধারণ করা হবে।
এ লক্ষ্যে সাত সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় কবরস্থানের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টারকে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করেন দুই প্রার্থী। বাছাই শেষে তাদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়-আব্দুল কুদ্দুসকে ছাতা ও শরিফুল ইসলামকে চেয়ার প্রতীক দেওয়া হয়েছে।
ভোটার তালিকা ও নির্বাচন আয়োজন
তিন গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন পুরুষ সদস্যকে ভোটার করে তৈরি করা হয় তালিকা। সর্বমোট ৮০০ জন ভোটার আগামী ২৪ মে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কবরস্থান-সংলগ্ন ঈদগাহ ময়দানে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান করবেন। নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় হবে মনোনয়ন বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত ৬০ হাজার টাকা।
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় যুবক সুজন হোসেন বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের মতো আমেজ তৈরি হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনরাও বলছে, নির্বাচন দেখতে আসবে। ভালো লাগছে এমন উৎসব দেখতে পেয়ে। আশা করি, নির্বাচিত সভাপতি কবরস্থানের উন্নয়ন করবেন।”
অনেকে বলছেন, এটি যেমন ব্যতিক্রম, তেমনি সমাজে গণতান্ত্রিক চর্চার একটি অনন্য উদাহরণ। তবে কেউ কেউ কবরস্থান নিয়ে এমন রাজনীতি বা প্রতিযোগিতাকে অশোভন বলেও মন্তব্য করেছেন।
প্রশাসনের প্রস্তুতি
ওসি মঞ্জুরুল আলম বলেন, “নির্বাচনের দিন যদি মনে হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
কবরস্থানের মতো ধর্মীয় ও পবিত্র বিষয়ে এই ধরনের সরাসরি ভোট একদিকে সামাজিক অংশগ্রহণ বাড়ালেও, অন্যদিকে এতে রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন দেখার বিষয়-কে হবেন জান্নাতুল বাকি কবরস্থানের পরবর্তী সভাপতি, এবং তিনিই বা কতটুকু রাখতে পারবেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি।