নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বড় ধরনের আর্থিক তহবিল সংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর সহায়তা প্রায় ৭০ শতাংশ কমে যাওয়ায় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্প চালানো সম্ভব হলেও ২০২৬ সালের পরের পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ফান্ড সংকটের প্রভাব পড়ছে সরাসরি কর্মসংস্থানে। প্রতিদিন চাকরি হারাচ্ছেন বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী, যার মধ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। চাকরিহারা অনেকে নানা অপরাধচক্রে জড়িয়ে পড়ায় ক্যাম্প এলাকায় নিরাপত্তা সংকট বাড়ছে। নারী রোহিঙ্গারাও বেকার হয়ে একইভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কক্সবাজার ও টেকনাফের ক্যাম্পে বর্তমানে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। চাকরি হারিয়ে ইতোমধ্যেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নারী রোহিঙ্গারা। তারা চাকরি ফেরানোর দাবিতে আলটিমেটামও দিয়েছেন।
মানবিক সহায়তা প্রকল্প সংকুচিত হওয়ায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীও চরম সংকটে পড়েছেন। বিশেষ করে শিক্ষিকা ও সমাজকর্মী নারীরা চাকরি হারিয়ে মানসিক অবসাদ ও হতাশায় ভুগছেন। আগে তারা পরিবারে উপার্জনের মূল ভরসা ছিলেন এবং শিশু শিক্ষা ও নারী ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতেন। এখন প্রকল্প বন্ধ বা সীমিত হওয়ায় তাদের কর্মজীবন থমকে গেছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আগে তাদের ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার প্রকল্প ছিল, যা তহবিল সংকটে নেমে এসেছে ৩ থেকে ৪ কোটিতে।
সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য কাজ করছে। স্কাসের চেয়ারপারসন জেসমিন প্রেমা বলেন, “ক্যাম্পগুলোতে তহবিল সংকট, স্থানীয় নারীদের বেকারত্ব বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ এবং বাজারোপযোগী চাকরির অভাব—সব মিলিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। শুধু এনজিওর ওপর নির্ভর না করে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বিকল্প কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহায়তা, নারীদের পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করতে হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদার ও মাদক দমন অভিযান আরও কার্যকর করা জরুরি।”
তহবিল সংকটের প্রভাব স্থানীয় অর্থনীতিতেও পড়ছে। বেকারত্ব বাড়ায় আয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, ব্যয় বেড়েছে, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে অনেক পরিবার দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ সুযোগে অপরাধচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যুবসমাজ মাদক ব্যবসা ও সেবনে জড়িয়ে পড়ছে, চুরি-ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়ছে।
পরিবেশও এ সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্যাম্পের আশপাশে বন উজাড়, ভূমি ক্ষয়, পানিদূষণ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। আগে এনজিওগুলোর পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্প চালু থাকলেও তহবিল সংকটে তা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেছেন—যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে এই সংকট ভয়াবহ রূপ নেবে, যার প্রভাব শুধু রোহিঙ্গা নয়, পুরো সমাজকে ভুগতে হবে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.