নিজস্ব প্রতিবেদক: শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পরে বিদ্রোহী অবস্থায় ৮-আগস্ট সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী কায়দায় সরকারি পিস্তল হাতে নিয়ে ওসি হাফিজের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট পুলিশদের হামলার পর থেকে জাজিরা হয়ে ওঠে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে। ওসি হাফিজের পালিয়ে বিদায়ের পরে ওসি আল-আমিন কিছুদিন দায়িত্ব পালন করার পরে থানার ভিতরেই তিনি আত্মহত্যা করে মারা যান। এরপর ওসি দুলাল আকন্দও পারেননি জাজিরার অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করতে।
তবে, কারিশ্মাটিক পুলিশ কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মাইনুল ইসলাম জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হয়ে এসেই অপরাধী আর আওয়ামিলীগের নিরাপদ আশ্রয়স্থল খ্যাত জাজিরার বিভিন্ন প্রান্তে লুকিয়ে থাকা ভয়ংকর সব অপরাধীদের বিশেষ করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের একে – একে ধরতে থাকেন। আওয়ামী আমলে নির্যাতিত এই ইন্সপেক্টর একজন দক্ষ পুলিশ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন নিরলসভাবে। অল্পদিনেই অপরাধীদের আতংকে পরিণত হওয়া ওসি মাইনুল ইতিমধ্যেই ঢাকা রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ অফিসার হিসেবে পুরষ্কৃত হয়েছেন পুলিশের পক্ষ থেকে।
এরইমধ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ঢালাও বদলীর আওতায় চলে আসে শরীয়তপুরের সব কয়টি থানায়। তবে বদলীর চিঠি বের হওয়ার পরে অন্যান্য থানার বিষয়ে খুব একটা আলোচনা না হলেও ওসি মাইনুলের জাজিরা থানা থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলীর খবরে জাজিরা ছাপিয়ে সারা শরীয়তপুরব্যাপী এমনকি আশেপাশের জেলাতেও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া আওয়ামী অধ্যুষিত এই এলাকাটিতে এতোদিন পালিয়ে বেড়ানো কিংবা ভালো সেজে থাকা অপরাধীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেলেও এখানে বসবাস করা সাধারণ মানুষ রয়েছে চরম আতঙ্কে।
প্রসঙ্গতঃ ওসি মাইনুল ইসলাম ২০২৫ সালের ৪ জুন থেকে এই পর্যন্ত মাত্র প্রায় হাজার খানেক আসামিকে গ্রেফতার করেন। যাদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে থাকা অপরাধী ৪৭৫ জন, কয়েকটি হ*ত্যা মামলায় প্রায় তিন ডজন আসামি গ্রেফতার করেন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি রয়েছে ব্যাপক, ৮৭ টা মাদক মামলায় আসামি ১৩২ জন, গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি প্রায় শতাধিক এবং কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ৪৩ জন। এছাড়াও বোমাবাজি করে মারামারির জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচিত বিলাসপুর থেকে বোমা তৈরির জন্য আনা বিস্ফোরক ও মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যাপক পরিমাণে ইয়াবা, গাঁজা ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হেরোইন জব্দ করা হয়। অপরাধ দমনে যা জাজিরা থানাকে গত প্রায় এক যুগেরও অধিক সময়ের মধ্যে ঐতিহাসিক সাফল্য এনে দিয়েছে।
জাজিরার প্রত্যেকটি জায়গায় এখন একটাই আলোচনা ওসি মাইনুল ইসলাম থাকাবস্থায় অপরাধীদের জন্য ভয়াবহ বিপদ ছিলো। সে কয়েক বছর থাকলে ভালো হয়ে যেতে হবে সকল অপরাধীদের, অন্যথায় জেলখানায় থাকতে হবে বা গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত পালিয়ে বেড়াতে হবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকা ব্যাক্তি ও তাদের আশ্রয়দাতাদের পর্যন্ত ছাড় দেননা ওসি মাইনুল ইসলাম।
এদিকে অপরাধ দমনে ওসি মাইনুলের শক্ত অবস্থানের ফলে এতোদিন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলো কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামিলীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনসহ অন্যান্য কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু ওসি মাইনুলের বদলীর খবরে তারা এখন ব্যাপক উচ্ছ্বসিত। তারা ওসি মাইনুলকে জাজিরা থানায় বেশিদিন দেখতে চায়নি কারণ, ওসি মাইনুল ইসলাম রাজনৈতিক পরিচয়ে কেউ অপরাধ করলে কিংবা অপরাধীদের আশ্রয় দিলে তাদের মোটেও সহ্য করেননি। বিশেষ করে দালাল শ্রেণির লোকদের বিষয়ে তিনি জাজিরা থানায় যোগদান করেই বিশেষ হুশিয়ারি প্রদান করেন। যার ফলে, দীর্ঘদিন যাবত জাজিরা থানার আশেপাশে থেকে দালালি করা অনেকেই তার প্রতি ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছিলো। যাদের অধিকাংশই কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী।
অপরাধীরা তাদের হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাজিরার ভয়ংকর সব অপরাধীরা। দীর্ঘদিন যাবত পালিয়ে থাকলেও ফেসবুকে তারা “আলহামদুলিল্লাহ” এর অপব্যবহার করে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। এমনকি দীর্ঘদিন যাবত বোমাবাজির মাধ্যমে মারামারি দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নিয়মিত করে আসা অপরাধ করতে না পারা বিলাসপুর ও আশেপাশের কিছু আওয়ামী নেতারা ইতিমধ্যেই নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছে তাদের স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী গুলোকে সংগঠিত হওয়ার। যার ফলে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় হাতবোমা তৈরির সরঞ্জাম এনে বোমা তৈরি শুরু করার পাশাপাশি নিয়মিত গোপন মিটিং করছে এসব অপরাধীরা।
যার ফলে, স্থানীয় সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন জায়গার অতি সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বলাবলি করছেন আর কিছুদিন থেকে গেলেই হয়তো জাজিরা স্থায়ীভাবে শান্তির জনপদে পরিণত হতো। তবে, ভয়ে সরাসরি কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করছেনা কেউ।,
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাজিরার একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্বনামধন্য শিক্ষক জানান, তিনি অপরাধ দমনে অত্যন্ত সাহসী একজন মানুষ ছিলেন। অন্তত আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তার উপস্থিতি জাজিরা বাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই গোপালগঞ্জ থেকেও অধিক আওয়ামী অধ্যুষিত অভিশপ্ত এই জাজিরার বিষয়টি আলাদাভাবে বিবেচনায় নিয়ে ওসি মাইনুল ইসলাম সাহেবকে অন্তত নির্বাচন পরবর্তী স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি পর্যন্ত এখানে রাখতে। অন্যথায় ব্যাপক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে এমনকি বহু মানুষের জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হবে এটা সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
জাজিরা থানাকে শ্রেষ্ঠতৃের এই গৌরব এনে দেয়া অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইনুল ইসলাম জানান, আমি অপরাধীদের শুধুমাত্র অপরাধী হিসেবেই দেখি, তাদের অন্য কোন পরিচয় বিবেচনা করার কোন সুযোগ আমার কাছে নেই। কাজেই আমাকে কে ভালো বললো আর কে খারাপ বললো তাতে আমার কিছুই যায় বা আসে না, আমি যতদিন দায়িত্বে আছি শুধু অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাবো। তাছাড়া সরকার তাদের প্রয়োজনে যেখানেই দিবেন যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন বলে তিনি জানান। তবে, বদলীতে অসন্তোষ না থাকলেও আওয়ামী অধ্যুষিত জাজিরায় অপরাধীদের চুড়ান্ত পর্যায়ে দমন করার জন্য আর কিছুটা সময় পেলে ভালো হতো বলেও তিনি জানান।
নড়িয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি) আশিকুর রহমান জানান, তিনি জাজিরা থানায় অপরাধ দমনে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে বদলী করা হলে আমাদের কিছুই করার থাকেনা। পাশাপাশি অন্তত জাজিরার পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে এখানে রাখা গেলে জাজিরার শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনের অত্যন্ত ভালো হতো দাবি করে তিনি এসপি মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন বলে জানান। বিশেষ করে তাদের কাছে মতামত চাইলে জাজিরার পরিস্থিতি বিবেচনায় অবশ্যই ওসি মাইনুল ইসলামকে এখানে রখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করবেন বলেও জানান।,
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.