নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সংলাপের ধীরগতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনিশ্চয়তা এবং কিছু ইস্যুতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছেন অংশগ্রহণকারী দলের নেতারা। প্রশ্ন উঠেছে—সংলাপের প্রকৃতি, ইস্যু নির্বাচন ও সিদ্ধান্ত নেয়ার পদ্ধতি নিয়েও।
বর্তমানে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ চলছে, যেখানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এলডিপি, গণ অধিকার পরিষদ, সিপিবি, গণফোরামসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। ঐকমত্য কমিশন ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি জাতীয় দলিল প্রণয়নের পরিকল্পনা করেছে, যা রাষ্ট্রীয় সংস্কারের রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই গতিতে চললে কেয়ামত পর্যন্ত সময় লাগবে। খানিকটা আলোচনা, বেশিটা খানাপিনা চলছে।”
এনসিপির আরিফুল ইসলাম আদিব অভিযোগ করেন, “ছয়টি প্রস্তাবনা থাকলেও কমিশনের সভাপতি এখন এককভাবে বিএনপিপন্থী একটি প্রস্তাবকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।”
এলডিপি সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “একই বিষয় বারবার তোলা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থান পরিষ্কার নয়।”
গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর বলেন, “নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দল একসঙ্গে সংলাপে থাকায় অংশগ্রহণের মানদণ্ড নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া আন্দোলনকেন্দ্রিক শক্তি ও পেশাজীবী সংগঠনের মতামত উপেক্ষিত।”
সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স মন্তব্য করেন, “নির্বাচনে টাকা, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনিক কারসাজি বন্ধে কমিশনের কোনো গঠনমূলক আলোচনা নেই।”
সংলাপ চলাকালীন জামায়াত এক দিনের জন্য বয়কট করে। সিপিবি ও গণফোরামের প্রতিনিধি দল সংলাপে কথা বলার পর্যাপ্ত সুযোগ না পেয়ে ওয়াকআউট করেন। আসনবিন্যাস নিয়েও ক্ষোভ জানিয়ে কয়েকজন সিনিয়র নেতা পেছনের সারিতে গিয়ে বসেন।
এ বিষয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “মতপার্থক্য স্বাভাবিক। আমরা ৬ বা ৭ জুলাই পর্যন্ত সংলাপ চালিয়ে যাব। এরপর ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করা হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃত ঐকমত্য গঠনে সংলাপের কাঠামো ও প্রক্রিয়ায় গতি ও স্বচ্ছতা জরুরি। নইলে সংলাপ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.