
নিজস্ব প্রতিবেদক: এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের বাড়ির কাজের মেয়েও কোটিপতি। গৃহকর্মীর নাম মর্জিনা আক্তার। শীর্ষ ব্যবসায়ী এস আলমের গৃহকর্মী মর্জিনা আক্তারের নামে কোটি টাকার সম্পত্তি ছাড়াও কয়েকটি এফডিআরের সন্ধান মিলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
পেশায় গৃহকর্মী হলেও মর্জিনার নামে দু’টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। এছাড়া মর্জিনার নামে কয়েকটি ব্যাংকে ২২টি এফডিআর’এ থাকা এক কোটি টাকা জমা রাখার সন্ধান পাওয়া গেছে। ইসলামী ব্যাংকে চাকরি দেখিয়ে নিজ নামে এ সম্পদ গড়েছে মর্জিনা আক্তার ও তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন।
এস আলমের কল্যাণেই মিলেছে এ চাকরি। দুজনই একই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের নামে ধোবাউড়া উপজেলা ডাকবাংলোর সামনেও জমি রয়েছে। সাদ্দাম ও তার স্ত্রী মর্জিনার বিরুদ্ধে সরকারি পুকুর এবং জনসাধারণের যাতায়াতের রাস্তা দখলেরও অভিযোগ রয়েছে’।
জানা যায়, গৃহকর্মী মর্জিনার নামে চট্টগ্রামের দুটি ব্যাংকে দুটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের শুরুতে খোলা একটি অ্যাকাউন্টে ২২টি এফডিআরের তথ্য রয়েছে। চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংক পাঁচলাইশ শাখায় মর্জিনা আক্তারের নামে ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা করে ২২টি এফডিআরের মোট টাকার পরিমাণ মোট ১ কোটি ১০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া মর্জিনা আক্তারের নামে চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। এ হিসাবে তাঁর রয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এ গৃহকর্মীর দুটি ব্যাংকে মোট ২ কোটি ৮৪ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা রয়েছে।
চট্টগ্রামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রবর্তক মোড় শাখায় মর্জিনা আক্তারের নামে গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এক কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নগদ ও চেকের মাধ্যমে এসব অর্থ জমা হলেও কিছুদিনের মধ্যে সেই অর্থ উত্তোলন করা হয়। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মর্জিনা আক্তারের ব্যাংক হিসাবে এখন জমা আছে মাত্র ৬০৫ টাকা।’
অন্যদিকে, ইসলামী ব্যাংকের পাঁচলাইশ চট্টগ্রাম শাখায় মর্জিনা আক্তারের নামে খোলা আরেকটি ব্যাংক হিসাবের খোঁজ মিলেছে। মেঘনা ভবন, প্যারেড কর্নার, এই ঠিকানা ব্যবহার করে খোলা ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়। এই অ্যাকাউন্টে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের স্থিতি ছিল চার লাখ ৭০ হাজার ৯০৩ টাকা।
এসব বিষয়ে কথা বলতে মর্জিনা আক্তারের ব্যাংক হিসাবে দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।তবে তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন বলেন, এস আলমের মালিকানাধীন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মর্জিনা অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। তার নামে দুটি ব্যাংকে থাকা টাকা ইসলামী ব্যাংকের যাকাত ফান্ডের ও তাদের সঞ্চয় করা অর্থ।
এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে স্থানীয় প্রশাসন। একজন গৃহকর্মীর ব্যাংক হিসাবে কিভাবে কোটি টাকার লেনদেন হয় এবং কীভাবে কোটি টাকার এফডিআর খোলা যায়; এ নিয়ে বিস্মিত খোদ ব্যাংক কর্মকর্তারা। মর্জিনার নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে টাকা কোন স্থান থেকে এসেছে, কারা জমা দিয়েছে এসব অর্থ, তা খতিয়ে দেখছে এনবিআর।’