
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু এক ছাত্রের আগুনে পোড়া মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রবিবার (১১) সকাল ৬টার দিকে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সিংদাহ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরের একটি ডোবা থেকে এই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। নিহত ছাত্রের নাম শাহরিয়ার অর্নব রিউশা। তিনি ওই গ্রামের সোহেল রানার ছেলে।
বিকেলে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), মো. সোলায়মান হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
নিহতের স্বজনদের দাবি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান রিউশা। চলতি ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, রাজশাহী বিদ্যালয়সহ অন্তত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন তিনি। তবে একটিতেও ভর্তির সুযোগ হয়নি তার। এ নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন রিউশা। তাদের ভাষ্য, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ভর্তির সুযোগ না পেয়েও শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন রিউশা।
জানা গেছে, রিউশা কুষ্টিয়া এডুকেয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২২ সালে এসএসসি পাশ করে ঢাকায় চলে আসেন। সেখানে ঢাকা কলেজ থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে পরীক্ষা দেয় সে। এরপর ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়। সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়। তবে একটিতেও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
তারা আরও জানায়, গত শুক্রবার (৯ মে) ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন রিউশা। গতকাল শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মা মুক্তা খাতুন তার বাবার বাড়িতে রিউশার জামা কাপড় আনতে গিয়েছিলেন। এরপর রাত সোয়া ৯টা থেকে রিউশাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতে সম্ভাব্য সকল স্থানেও খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। আজ সকাল ৬টার দিকে বাড়ির পাশে ডোবা থেকে পোড়া ও বিবস্ত্র অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করেন স্বজনরা।
রিউশার খালা আইনজীবী রত্না খাতুন বলেন, রিউশা খুব মেধাবী, বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে ছিলেন। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েও ভর্তি হতে পারেনি। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। আমরা ওকে সাহস দিতাম। তবুও শেষ রক্ষা হলো না তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে হয়তো শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।’