
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদকে নিয়ে যখন সারা দেশে তোলপাড় চলছে ঠিক সেসময় দুর্নীতি দমন কমিশন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়েও কাজ শুরু করেছে। আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন এখন আজিজ আহমেদের দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করা যাবে কি না তা নিয়ে পর্যালোচনা করছে এবং আইনগত মতামত গ্রহণ করছে।
উল্লেখ্য, আজিজ আহমেদ সাবেক সেনাপ্রধান এবং সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার এবং পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় আজিজ আহমেদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ সরাসরি উত্থাপন করেছে। যদিও সাবেক সেনাপ্রধান তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনীত অভিযোগ গুলোকে সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন মনে করছে, আইনি কাঠামোর মধ্যে যদি আজিজ আহমেদের অপরাধগুলো থাকে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত হয় সেক্ষেত্রে তারা বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করবে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
আজিজ আহমেদের দুর্নীতির বিষয়ে আইনজীবীরা দুই ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন। প্রথমত, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যদি সেনাপ্রধান থাকাকালীন অবস্থায় কোন কেনা-কাটা বা অন্যকোন কাজে দুর্নীতির অভিযোগ থাকে তবে সেটি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করতে পারবে না। কারণ সেনা আইন অনুযায়ী এধরনের তদন্তের এখতিয়ার একমাত্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এবং সেনাবাহিনীর। আবার যেহেতু তিনি সেনাপ্রধান ছিলেন কাজেই সেনাবাহিনী স্ব-প্রণোদিত হয়ে কোন তদন্ত করতে পারবে না। কিন্তু আজিজ আহমেদ যদি তার জ্ঞাত আয় উৎস বহির্ভূত সম্পদ গড়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তার আয় বহিভূর্ত সম্পদ বা অবৈধ সম্পদ তদন্ত করার এখতিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের তফসিলভুক্ত অপরাধ। এবং সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করতে পারে।
আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় বা থাকার পর তার আয়ের উৎস বহির্ভূত পন্থায় যে সমস্ত সম্পত্তি গুলো তৈরি করেছেন সেসসমস্ত সম্পত্তির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে, সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি দেখা যায় চাকরিকালীন সময়ে আজিজ আহমেদের যে আয় এবং তার যে সম্পদ তার মধ্যে যদি ফারাক থাকে তবে সেক্ষেত্রে তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের আওতায় আনা হবে।
দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, আজিজ আহমেদ এখন দুদকের জালে। তার বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন খতিয়ে দেখছে। এবং তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন কি ছিলেন না সেটি বড় বিষয় নয়, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার যদি কোন অবৈধ সম্পদ থেকে থাকে তাহলে সেই অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন অবশ্যই তদন্ত করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে’।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদ ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ সম্পদ তৈরি করেছেন। এখন দেখার বিষয়, এই সম্পদ গুলো তিনি কিভাবে ক্রয় করেছেন। তার আয়ের সাথে এই সম্পদের সামঞ্জস্যতা আছে কিনা এবং যদি সামঞ্জস্যতা না থাকে তাহলে এই সম্পদের অর্থের উৎস কি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সূত্রগুলো বলছে, তাদের আইন শাখা বিষয়টি পুঙ্খানু-পুঙ্খ বিশ্লেষণ করছে এবং খোঁজ খবর নিচ্ছে। এর পরই দুদক এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক অবস্থান ব্যক্ত করবে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে যে দুর্নীতির ব্যাপারে তারা এখন শূন্য সহিষ্ণুতাই অবস্থান করছেন। আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগগুলোর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায় তা হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’