
নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে বাংলাদেশের নিট প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ৬১ দশমিক ৫৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা সেল (এফআইইডি)–এর হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময় নিট এফডিআই প্রবাহ ছিল ৩০ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যা জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকের ৭৮ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মূলধন (ইকুইটি), পুনর্বিনিয়োগ (রিইনভেস্টেড আর্নিংস) ও আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ (ইন্ট্রাকোম্পানি লোন)—এই তিন উপখাতের সবকটিতেই এফডিআই প্রবাহ কমেছে।
তবে ২০২৪ সালের একই প্রান্তিকের তুলনায় এ বছরের এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে নিট এফডিআই প্রবাহ বেড়েছে ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ। বিদ্যমান বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্বিনিয়োগ এক বছরে বেড়েছে ৫৯৫ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে নতুন মূলধন বা ইকুইটি বিনিয়োগ কমেছে ৬২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
বিডার মুখপাত্র ও হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য পরিবেশে অনিশ্চয়তা বিরাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, রেড সি ও পানামা খালে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন এবং বিভিন্ন দেশের রফতানিমুখী ভর্তুকি ও শুল্কনীতির পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল বিপর্যস্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত বা পুনর্মূল্যায়ন করেছে। ফলে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগে সাময়িক মন্দা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বছরের প্রথম প্রান্তিকে নির্দিষ্ট প্রকল্পে এককালীন বড় অঙ্কের ইকুইটি বা ঋণ আসার ফলে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তুলনামূলকভাবে কম প্রবাহ দেখা গেছে, যা একটি স্বাভাবিক মৌসুমি প্রভাব।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এবং বিদ্যুৎ–জ্বালানি খাতের সমস্যার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের এফডিআই প্রবাহে।
জাপান–বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সভাপতি তারেক রফি ভূঁইয়া বলেন, বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে ‘অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ’ অবস্থানে আছেন। স্থিতিশীল সরকার গঠনের পর তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।
অন্যদিকে মালয়েশীয় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ ও বিনিয়োগ নিরাপত্তা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা কাটলে বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, এফডিআইয়ের এ হ্রাস দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ও সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য একটি সতর্ক সংকেত। দীর্ঘমেয়াদে এটি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, নতুন ইকুইটি বিনিয়োগ ৬২ শতাংশ কমে যাওয়া উদ্বেগজনক। এটি ইঙ্গিত করছে যে পূর্ববর্তী বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখলেও নতুন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, এফডিআই হ্রাস অর্থনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। সরকারি নীতির স্বচ্ছতা, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা গেলে এ প্রবণতা পাল্টানো সম্ভব।