নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটির মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কয়েক মাসের ট্রায়ালের পর গত মাস থেকে শিক্ষকদের বেতন ইএফটিতে দেওয়া শুরু হয়েছে। এ নিয়ে নানা জটিলতায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে এখনও ডিসেম্বর মাসের বেতন পাননি ৪০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী।
জানা গেছে, বেসরকারি স্কুলকলেজের ৩ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য যাচাই করছে মাউশি। এরমধ্যে প্রথম ধাপে এক লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বর-২০২৪ মাসে ইএফটিতে বেতন পেয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার এবং তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার ৭০০ শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটিতে বেতন পেয়েছেন। সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মচারী ইএফটিতে ডিসেম্বর-২০২৪ মাসের বেতন ভাতা পেয়েছেন। সে হিসেবে এখনও ডিসেম্বর মাসের বেতন পাননি প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেল সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য যাচাইকালে অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর ডাবল এমপিও, ভুল তথ্য দিয়ে এমপিও নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। এছাড়া অনেকের মাউশির এমপিও শিটের তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যের মিল নেই। আবার অনেকের ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের মিল নেই। বিষয়গুলো সমাধান করে চতুর্থ এবং পঞ্চম ধাপে শিক্ষকদের ডিসেম্বর মাসের বেতন ছাড়ের চেষ্টা চলছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইএমআইএস সেলের এক কর্মকর্তা জানান, ‘তৃতীয় ধাপে যারা বেতনবঞ্চিত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৮ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ছাড় করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসারের কাছে তথ্য পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই চতুর্থ ধাপের বেতন ব্যাংকে পাঠানো হবে। চতুর্থ ধাপে যারা বেতন পাবেন না তাদের ৫ম ধাপে বেতন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির ফিন্যান্স এন্ড প্রকিউরমেন্ট উইংয়ের পরিচালক গোপীনাথ পাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মাউশির এমপিও শিটের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যগত ভুল থাকায় অনেকে এখনও বেতন পাননি। বিষয়টি সমাধানের জন্য ইএমআইএস সেল কাজ করছে। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ছাড় করা সম্ভব হবে।’
তথ্য সংশোধন না করলে বেতন বন্ধ
ইএফটিতে দ্বিতীয়, তৃতীয় ধাপে বেতন পাওয়া এবং চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে বেতন পেতে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা ভুল সংশোধন না করলে আগামী এপ্রিল মাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।'
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২য়, ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম লটে যে সকল শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বর-২০২৪ মাসের এমপিও এর অর্থ ইএফটিতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং তথ্যের ভুলের কারণে যাদের এমপিও এর অর্থ প্রেরণ করা সম্ভব হয়নি তাদেরকে অনলাইন এমপিও সিস্টেমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করে তথ্য সংশোধন করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ভুল তথ্যের কারণে এপ্রিল-২০২৫ মাস থেকে তাদের এমপিও এর অর্থ প্রেরণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।’
মাউশি জানিয়েছে, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে অনেকের এমপিও শিটের নামের সাথে এনআইডি এর নামের ডট (.), হাইফেন (-), কমা (,) বা আক্ষরিক অমিল আছে অথবা ব্যাংক হিসাবের নাম আংশিক ভুল আছে কিন্তু জন্মতারিখ অভিন্ন এমন শিক্ষক-কর্মচারীর ডিসেম্বর মাসের এমপিও এর অর্থ ইতোমধ্যে ২য় ও ৩য় লটে ইএফটিতে প্রেরণ করা হয়েছে। এমপিও শিটের নাম এবং এনআইডি এর নাম অভিন্ন কিন্তু জন্মতারিখ একই বছরে তবে অভিন্ন নয় এমন ৮ হাজার ২৩৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ডিসেম্বর-২০২৪ মাসের এমপিও এর অর্থ প্রেরণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং ৮ হাজার ৮৮৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য যাচাই এর জন্য আইবাস++ এ প্রেরণ করা হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করে এমপিও শিটের তথ্য অনলাইনে সংশোধন করা হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এমপিও ডাটাবেজে সংশোধিত হবে। তবে এনআইডি এবং ব্যাংকের তথ্য সংশোধনের পর পরবর্তী কর্যক্রমের জন্য এমপিও ইএফটি মডিউলে লগ-ইন করে অনলাইনে আঞ্চলিক পরিচালক (কলেজের ক্ষেত্রে) বা উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (স্কুলের ক্ষেত্রে) মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করতে হবে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক দাখিলকৃত ইএফটিতে অর্থ প্রেরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় এমপিও এর তথ্য সংশোধনের অনলাইন আবেদন প্রচলিত এমপিও আবেদনের সিডিউলের বাইরে নিম্নে বর্ণিত সিডিউল মোতাবেক সংশোধন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য অঞ্চলের পরিচালক (কলেজ), উপপরিচালক (মাধ্যমিক), জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাগণকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’