
নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে দেশের ১৭টি কারাগারে সংঘটিত হয় নজিরবিহীন হামলা ও বিদ্রোহের ঘটনা। এসব ঘটনায় শতাধিক বন্দি পালিয়ে যান এবং বেশ কয়েকটি কারাগার চরম বিশৃঙ্খলার মুখে পড়ে।
কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ওই সময় পাঁচটি কারাগার থেকে দুই হাজারের বেশি বন্দি পালিয়ে যান। অনেককে পরে গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণ করানো গেলেও এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখনও প্রায় ৭০০ জন পলাতক রয়েছেন। নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন হলি আর্টিজানে জড়িত জঙ্গিসহ ভয়ংকর অপরাধী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯৮ জন আসামি।
ঘটনার শুরু হয় ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, যখন নরসিংদী জেলা কারাগারে বাইরে থেকে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই দিনই ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যান। এরপর বিটিভিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের গুজব ছড়ালে ৫ আগস্ট থেকে বন্দিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
৬ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, শেরপুর এবং গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারসহ চারটি কারাগার থেকে পালিয়ে যায় আরও প্রায় ১২০০ বন্দি। এসব কারাগারে কারারক্ষীদের ওপর হামলা চালানো হয়, লুট করা হয় অস্ত্রাগার, খাদ্য গুদাম ও নথিপত্র।
কাশিমপুর ও জামালপুর কারাগারে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ জন বন্দি নিহত হন। কাশিমপুরে কারারক্ষীদের গুলিতে ছয়জন ও জামালপুরে সংঘর্ষের সময় সাতজন বন্দি প্রাণ হারান।
কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই সহিংসতায় দেশের ১৭টি কারাগারে মোট ২৮২ জন কারারক্ষী আহত হন। একই সময়ে খোয়া যায় ৯২টি আগ্নেয়াস্ত্র, যার মধ্যে এখনও উদ্ধার হয়নি ২৭টি।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন শুক্রবার জানান, “পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে ৯ জন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি রয়েছেন, যাঁরা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ ছাড়া প্রায় ৭০ জন বিচারাধীন জঙ্গিও পলাতক রয়েছে।”
ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদারে নেওয়া হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। সীমানাপ্রাচীর উঁচু করা, কারাগারে প্রযুক্তি ব্যবহার এবং কারারক্ষীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নরসিংদী, কাশিমপুর, জামালপুর, কুষ্টিয়া ও সিরাজগঞ্জ—এই কারাগারগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি ও নিরাপত্তা ভাঙনের মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। সিরাজগঞ্জে রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে নির্দিষ্ট কয়েদি মুক্তি পাওয়ার পর অন্য বন্দিদের অভ্যুত্থান দেশের কারা ইতিহাসে ব্যতিক্রমী নজির তৈরি করে।
কারাগার থেকে বন্দিদের এমন পালিয়ে যাওয়া এবং দীর্ঘদিনেও তাঁদের না পাওয়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচার প্রক্রিয়ার জন্য উদ্বেগজনক বার্তা দেয়। পলাতক বন্দিদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মহল।