
নিজস্ব প্রতিবেদক: এক সময় তারা প্রচণ্ড ক্ষমতাবান ছিলেন। তাদের কথায় অনেক কিছুই হতো। আওয়ামী লীগে তাদেরকে অত্যন্ত সমীহ করে চলা হত। এমনকি বড় বড় নেতারাও তাদেরকে অনেক বেশি ভয় পেতেন। বিভিন্ন সময় তারা আওয়ামী লীগ নেতাদেরকেও হুমকি ধামকি দিতেন। কিন্তু এখন তারা ক্ষমতাহীন, নিষ্প্রভভ। অনেকটা অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। এই ধরনের কিছু নেতা নতুন করে ক্ষমতাবান হওয়ার চেষ্টা করছেন বটে কিন্তু তারা আবার ক্ষমতাবান হতে পারবেন কি না এই নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা রকম সন্দেহ রয়েছে। এই সমস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন,
হাবিবে মিল্লাত: হাবিবে মিল্লাতের উত্থান ছিল বিস্ময়কর। ঠিক যেন এলাম দেখলাম জয় করলাম এর মতো। তিনি সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামাতা। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এই পারিবারিক পরিচয় ব্যবহার করে তিনি বিপুল ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন। মন্ত্রী না হলেও তিনি মন্ত্রীদের চেয়ে ক্ষমতাবান ছিলেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নেতাদেরকে নির্দেশনা দিতেন। এমনকি সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা মোহাম্মদ নাসিমকেও তিনি কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে। সেই হাবিবে মিল্লাত এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। তিনি এখন রাজনীতিতে অনেকটা অপাংক্তেয়। রাজনীতিতে তিনি ক্ষমতাবান হওয়ার চেষ্টা করছেন বটে কিন্তু সেই চেষ্টা কতটুকু সফল হবেন তা কেউ জানে না।
ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন: ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ছিলেন এক সময় দুর্দান্ত ক্ষমতাবান নেতা। ফরিদপুর থেকে নির্বাচিত এই সাবেক সংসদ সদস্য প্রথম দফায় হয়েছিলেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। এর পর তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লিগের অন্যতম নীতি নির্ধারক মনে করা হত তাকে। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদে অর্থাৎ ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি মন্ত্রিত্ব হারান। এরপর তার বিভিন্ন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিপুল অর্থ পাচারের কাহিনি ফাঁস হতে থাকে। এরপর তিনি চলে যান বিদেশে। এখন তিনি সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছেন। গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সুইজারল্যান্ডে ক্ষমতাহীন ভাবে নীরবে নিভৃতে জীবন যাপন করছেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী: সাইফুজ্জামান চৌধুরী চট্টগ্রামের রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি গত মেয়াদে ভূমি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার আগে তিনি একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রী হিসেবে তিনি যেমন প্রচণ্ড ক্ষমতাবান ছিলেন, তেমনি প্রশংসিত হয়েছিলেন। তবে মন্ত্রিত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর লন্ডনে তার বিপুল সম্পদের তথ্য ফাঁস হয়। এখন তিনি রাজনীতিতে অনেকটা কোনঠাসা। এমনকি চট্টগ্রামে স্থানীয় পর্যায়েও তিনি অর্থ প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রীর কাছে কোণঠাসা অবস্থায় আছেন। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তাকে এখন লড়াই করতে হচ্ছে।’
জাহিদ মালেক: জাহিদ মালেক দুই মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। প্রথম দফায় তিনি প্রতিমন্ত্রী। এর পরে তিনি পূর্ণমন্ত্রী হন। তার ক্ষমতার দাপটের কথা সবাই জানত। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পরও তিনি পাঁচ বছর বহাল তবিয়তে মন্ত্রী ছিলেন। তবে মন্ত্রিত্ব চলে যাবার পর এখন তার নানা রকম অপকর্ম এবং দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশিত হচ্ছে। রাজনীতিতে তিনি এখন অনেকটাই কোণঠাসা, অনেকটাই ক্ষমতাহীন।
এনামুর রহমান: এনামুর রহমানের রাজনীতিতে উত্থান ছিলে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো। তিনি রানা প্লাজার ঘটনার পরপর আলোচনায় আসেন এবং তার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা করেই তিনি আলোচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। পরবর্তীতে তিনি ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। কিন্তু এবার নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর রাজনীতিতে তিনি গুটিয়ে গেছেন। এখন তিনি নিষ্প্রভ। এরকম বেশ কিছু একদা ক্ষমতাবানরা এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অপাংক্তেয় হয়ে পড়েছেন।’