
নীতিগত অনিশ্চয়তা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অবকাঠামো দুর্বলতা জাপানি বিনিয়োগে প্রধান বাধা
নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের সম্ভাবনা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায়। কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে জাপানের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) স্টক মাত্র ৪৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। জাপান টোব্যাকোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ যুক্ত করলেও এ অঙ্ক ২০০ কোটি ডলারের বেশি নয়। অথচ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, এমনকি কম্বোডিয়াতেও জাপানের এফডিআই বাংলাদেশ অপেক্ষা বহুগুণ বেশি।
জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সভাপতি তারেক রাফি ভুঁইয়ার মতে, নীতিগত ও নিয়ন্ত্রক অনিশ্চয়তা, হঠাৎ নীতিমালা পরিবর্তন এবং কর-কাস্টমস জটিলতা জাপানি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে। তার ভাষায়, “দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য স্থিতিশীল নীতিনির্ধারণ জরুরি, যা বাংলাদেশে এখনও অনুপস্থিত।”
তুলনামূলকভাবে ভারত, ভিয়েতনাম কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে ব্যবসা পরিচালনা সহজ, যেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। তাছাড়া অবকাঠামো দুর্বলতা, কাস্টমসে বিলম্ব এবং দক্ষ জনবলের অভাব জাপানি কোম্পানিগুলোর জন্য বড় প্রতিবন্ধক বলে মনে করেন তিনি।
বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জেবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আনোয়ার শহীদও। তিনি বলেন, “জাপান ধীরে এগোচ্ছে কারণ তারা বুঝে নিতে চায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আছে কিনা।”
তবে ব্যতিক্রমও আছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে নির্মাণাধীন বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে (বিএসইজেড) কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিঙ্গার বাংলাদেশ সেখানে কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন শুরু করেছে। তবে সার্বিক চিত্র এখনও আশাব্যঞ্জক নয়।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, “জাপানি বিনিয়োগকারীরা নিট অ্যান্ড ক্লিন ব্যবসার পরিবেশ চান। কিন্তু দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অনিশ্চয়তা তাদের নিরুৎসাহিত করছে। সরকারি পর্যায়ে আমরা যতটা আগ্রহী, বেসরকারি পর্যায়ে বাস্তব উদ্যোগের অভাব রয়েছে।”
রপ্তানিমুখী শিল্প, প্রযুক্তি খাত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে জাপানের আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রয়োজন নীতিগত স্থিতিশীলতা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্যোগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু সম্ভাবনা তুলে ধরলে হবে না—জাপানকে বাস্তব বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট করতে হলে প্রয়োজন কার্যকর সংস্কার, দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং আন্তরিকতা।