জুয়েল রানা: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার শ্যামলী পাড়া থেকে শুরু করে বড়পাঙ্গাসী পর্যন্ত বিস্তৃত গুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়কটি বর্তমানে দখল ও অব্যবস্থাপনার কারণে চরমভাবে বিপর্যস্ত। কয়েকটি ইউনিয়নরর কয়েক হাজার বাসিন্দারা পড়েছেন ভোগান্তিতে। একদিকে রাস্তার দুপাশে গজিয়ে উঠেছে ঘন আগাছা ও ঝোপঝাড়, অন্যদিকে যে জায়গাটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা, সেই জায়গা দখল করে রেখেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ। ফলে রাস্তাটি এখন কার্যত সংকুচিত হয়ে এসেছে, আর সাধারণ মানুষের জন্য এই রাস্তা এখন এক বিশাল দুর্ভোগের নাম।
সরকারি প্রকল্প অনুযায়ী, এই পাকা সড়কের দুপাশে তিন ফুট করে খোলা জায়গা থাকার কথা ছিল, যা পথচারী, সাইকেল, ভ্যানচালক কিংবা ছোট যানবাহনের চলাচলের সুবিধার্থে নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাস্তার পাশে গজিয়ে ওঠা আগাছা এবং কিছু প্রভাবশালী স্থানীয় বাসিন্দাদের বেআইনি দখলদারির কারণে সেই খোলা জায়গাগুলি এখন কোথাও নেই বললেই চলে।
কেউ সেখানে গাছপালা রোপণ করেছেন, কেউবা বাড়ির বেড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন রাস্তার প্রান্ত পর্যন্ত। এমনকি কোথাও কোথাও দেখা গেছে রাস্তার পাশে অবৈধ দোকান বা খড়ের গাদা রাখা হয়েছে। এর ফলে জরুরি প্রয়োজনে রিকশা, সিএনজি বা অ্যাম্বুলেন্স চলাচলও হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ।
এলাকাবাসীরার বলছেন, তারা বহুবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি দাবি করেছেন, প্রকৌশল বিভাগের পক্ষ থেকে নেই কোনো স্থায়ী সমাধান। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। কিন্তু আগাছা আর দখলের কারণে রাস্তা এতটাই সরু হয়ে গেছে যে, দুইটা বাইসাইকেলও পাশাপাশি যেতে পারে না। অনেক সময় গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেতে হয়। শিশুরা চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। রাস্তায় হাঁটতে গেলেও গা ঘেঁষে গাড়ি চলে। ঝোপে লুকিয়ে থাকে সাপ-বিচ্ছু। আমরা চরম আতঙ্কে থাকি, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর।
এ বিষয়ে উল্লাপাড় (সদর) ৩০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ডা: সামিউল ইসলাম রনি (আরএমও ) বলেন, বৃদ্ধ, নারী ও শিশুসহ সাধারন পথচারীদের চলাচল একদিকে যেমন কঠিন হয়ে পড়ছে, তেমনি বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পাশে জমে থাকা আগাছার ভেতর সৃষ্টি হয়েছে মশা, কীটপতঙ্গের আবাসস্থল। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, স্কিন ডিজিজসহ নানান রোগের বিস্তার ঘটছে এই সব এলাকার মানুষদের মধ্যে। বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বৃষ্টির ফলে রাস্তার প্রান্তে পানি জমে থাকে, আর সেই পানির মধ্যেই থাকে পচা আগাছা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, যা রাস্তার পিচ ঢালার অংশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এই সড়কটি শুধু উল্লাপাড়া নয়, বৃহত্তর সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে। এটি কৃষিপণ্য পরিবহন, স্কুল-কলেজ যাতায়াত, বাজার যোগাযোগ এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটিই এখন পরিণত হয়েছে দুর্ঘটনার ফাঁদে। এটি একটি উদাহরণ, কিভাবে অব্যবস্থাপনা, দখল ও গাফিলতির ফলে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল সাধারণ মানুষ পায় না। একটি রাস্তা শুধুমাত্র নির্মাণ করলেই চলে না, তার রক্ষণাবেক্ষণ না হলে তা অচল হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে মোঃ ইমরান ফারহান সুমেল (নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ, সড়ক বিভাগ, সিরাজগঞ্জ ) বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা আছে। রাস্তার দুধারে ৩ ফুটের জায়গার উপরে নির্মিত স্থাপনা গুলো অচিরেই উচ্ছেদ করা হবে এবং আগাছাগুলো পরিস্কার করা হবে । দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে-এই “চেষ্টা” আর কতদিন চলবে?
উল্লাপাড়ার শ্যামলী পাড়া থেকে বড়পাঙ্গাসী পর্যন্ত সড়কটি যেন এই এলাকার মানুষের আশা-ভরসার একটি শিরা। অথচ সেই শিরায় আজ দখল, আগাছা ও অবহেলার বিষক্রিয়া চলছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে শুধু চলাচলই নয়, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখনই সময়, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা একযোগে উদ্যোগ নেন-নইলে ‘উন্নয়নের সড়ক’ কেবল কথার ফুলঝুরিই রয়ে যাবে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.