
জুয়েল রানা: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মোড়দহ গাঁড়াবাড়ী দাখিল মাদ্রাসায় বছরের পর বছর জমি ও পুকুরের লিজ থেকে প্রাপ্ত অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার বর্তমান সুপার নুরুল আলম আনছারীর বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় দুই দশক ধরে দানকৃত এসব সম্পদ থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হলেও এর কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।
ভূমিদাতা পরিবারের সদস্য মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুল আলিম সরাসরি সুপারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে বলেন, ১৭ বছর ধরে জমি ও পুকুরের লিজ আয়ের এক টাকাও মাদ্রাসার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। দানকৃত এই সম্পদ থেকে ৩০-৪০ লাখ টাকার বেশি আয় হয়েছে। কোনো হিসাব নেই। উন্নয়নমূলক কোনো কাজও হয়নি। সুপার সাহেব এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, সুপার নুরুল আলম আনছারী জেলা ওলামা লীগের প্রচার সম্পাদক পদ ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং সেই প্রভাবকে ঢাল বানিয়ে শিক্ষক নিয়োগ-বাণিজ্য ও উন্নয়ন অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
মাদ্রাসার কয়েকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষক নিয়োগে লাখ লাখ টাকা লোপাট করেছেন সুপার। দানকৃত জমির আয়ের কোনোদিন সঠিক হিসাব প্রকাশ করা হয়নি। কেউ মুখ খুললে রাজনৈতিক প্রভাবে হুমকি দেওয়া হতো।
ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সুপার নুরুল আলম আনছারী জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আখ্যা দেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এগুলো আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা। কোনো অর্থ আত্মসাৎ বা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই।
তবে স্থানীয়দের দাবি, সুপারের এই বক্তব্য মূল ঘটনা আড়াল করার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে জমি ও সম্পদ দান করা হয়েছিল, তা এখন ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে। উন্নয়ন কাজ, শিক্ষক নিয়োগসহ সবক্ষেত্রে অনিয়ম চলছে।
অ্যাডভোকেট আবু তালেব বলেন , এটি স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা। স্থানীয়রা শিক্ষার প্রসারে কয়েক একর ফসলী জমি ও পুকুর দান করেছিলেন। সেখান থেকে প্রতিবছর প্রায় ২-৩ লাখ টাকা আয় হয়। সেই হিসাবে ১৬-১৭ বছরে ৩০-৪০ লাখ টাকার কোনো হিসাব নেই। আরও অনেক আয়-ব্যয়ের তথ্য অজানা। সুষ্ঠু তদন্ত হলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার নুরুল আলম আনছারীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল কাদের বিশ্বাস বলেন, আমার জানামতে বিগত সময়ে মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য ৮১-৮২ লাখ টাকা একাডেমিক সুপারভাইজারের মাধ্যমে মাদ্রাসার একাউন্টে জমা হয়েছে। তবে সুপারকে অন্য একটি পক্ষ মাদ্রাসায় প্রবেশ করতে না দেওয়ায় বিষয়গুলো সঠিকভাবে যাচাই করা যাচ্ছে না।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মোসলেম উদ্দিনকে ফোনে পাওয়া গেলে তিনি বলেন, আমি এখন সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ত আছি। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
ঘটনাটি জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।
অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহল দ্রুত ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দানের জমি-পুকুরের আয়ের স্বচ্ছ হিসাব প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। প্রয়োজনে নিরপেক্ষ অডিট কমিটি গঠন করে তদন্ত এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।