নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গত ১০ মে মধ্যরাতে ‘যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে’ শিরোনামে স্ট্যাটাস দেন উপদেষ্টা মাহফুজ। যদিও ওই স্ট্যাটাসটি পরে তিনি মুছে দেন।
উপদেষ্টার ওই মন্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উপদেষ্টা মাহফুজের এমন মন্তব্য পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে।
মাহফুজ আলম লিখেন, ‘৭১-এর প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে।
পাকিস্তান এ দেশে গণহত্যা চলিয়েছে। (পাকিস্তান অফিসিয়ালি ক্ষমা চাইলেও, তদুপরি আবারও ক্ষমা চাইতে রাজি হলেও, যুদ্ধাপরাধের সহযোগীরা এখনো ক্ষমা চায়নি)। ইনিয়ে-বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। জুলাইয়ের শক্তির মধ্যে ঢুকে স্যাবোটাজ করা বন্ধ করতে হবে। সাফ দিলে আসতে হবে।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, মুজিববাদী বামদের ক্ষমা নেই। লীগের গুম-খুন আর শাপলায়, মোদিবিরোধী আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের মস্তিষ্ক এরা। এরা থার্টি সিক্সথ ডিভিশন। জুলাইয়ের সময়ে এরা নিকৃষ্ট দালালি করেও এখন বহাল তবিয়তে আছে। আজ পর্যন্ত মুজিববাদী বামেরা কালচারালি ও ইন্টেলেকচুয়ালি জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মুজিববাদী বামেরা দেশে বসে জুলাইয়ের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। লীগের এসব বি-টিমও শিগগিরই পরাজিত হবে। অন্য কারো কাঁধে ভর করে লাভ নেই।,
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মন্তব্যকে উদ্দেশ্যমূলক বলেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। সোমবার বিকালে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ‘মেধাবীদের মুখোমুখি ছাত্রশিবির’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
নুরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযাচিত যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে উপদেষ্টা মাহফুজ কোনো একটা উদ্দেশ্যে এ কাজটি করেছেন। তিনি কেনে ধরনের কাজ করেছেন, তা দ্রুত স্পষ্ট করতে হবে। তিনি আরো বলেন, তিনি সংবিধানবিরোধী কাজ করে শপথ ভঙ্গ করেছেন। কোনো রাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাউকে হুমকি দেওয়া তার জন্য শোভনীয় কাজ নয়।
নুরুল ইসলাম আরো বলেন, ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বা রাজাকার সংশ্লিষ্ট যে ইস্যুগুলো তিনি নিয়ে এসেছেন এগুলো ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। এ ধরনের দোষারোপ আগেও করা হয়েছে। এটা করে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। আবার যারা এই রাস্তা অবলম্বন করতে চায়, নিঃসন্দেহে দেশের জনগণ তা ভালোভাবে নেবে না।
উপদেষ্টা মাহফুজ তার এ বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন শিবির সেক্রেটারি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সম্পর্কের প্রশ্নে নুরুল ইসলাম বলেন, “এনসিপি যখন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ হিসেবে কাজ করছিল, তখন তারা জানিয়েছিল তারা রাজনৈতিক সংগঠন নয়। পরে জুলাই আন্দোলনে কমন প্ল্যাটফরম হিসেবে আমরা গিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে ছাত্রশিবির অংশ নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক, কোটা সংস্কার আন্দোলন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন—সব ক্ষেত্রেই ইসলামী ছাত্রশিবির সক্রিয় ছিল। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতেও আমাদের উপস্থিতি ছিল।’
কোরআন দিবস উপলক্ষে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রশিবির এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ।'