
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬৯ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম। আহতদের অধিকাংশই আগুনে দগ্ধ বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই মডেলের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি কুর্মিটোলা ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। ১২ মিনিট পর সেটি উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এতে সাথে সাথে আগুন ধরে যায়। এ সময় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছিল এবং ছুটি শেষে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক তখনো স্কুল ভবনে অবস্থান করছিলেন।
ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, র্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মধ্যরাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ জনে। অন্তত ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, দগ্ধদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন শিশু রয়েছে, যাদের অনেকের শরীরের প্রায় ১০০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আজ মঙ্গলবারকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট, জাপানের কূটনীতিকসহ দেশি-বিদেশি নেতারা।
আইএসপিআর জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার আগে পাইলট বিমানটি জনবহুল এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন।
ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড়ে উদ্ধার তৎপরতা কিছুটা ব্যাহত হলেও স্কাউট, বিএনসিসি ও শিক্ষার্থীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করে। বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
পরিচয় শনাক্ত হওয়া মৃতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু হয়েছে। যাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়নি, তাদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আগামী তিনদিনের সব সরকারি পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।