
নজরুল ইসলাম: দিনের আলো ফোঁটার সাথে সাথেই তাঁতের খট খট শব্দে মুখরিত সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লীগুলো।
দেশজুড়ে তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ এ জেলা হিসেবে পরিচিত । সদর, বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও চৌহালী উপজেলায় পাওয়ার লুম ও হ্যান্ডলুম মিলে অন্তত আড়াই লক্ষাধিক তাঁত রয়েছে। তৈরি হয় আন্তর্জাতিক মানের লুঙ্গি, গামছা ও শাড়ি। উৎপাদিত এসব পণ্যেন কদর দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে। এ শিল্পটির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে অন্তত ১০ লাখ কর্মজীবী মানুষ। বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার তাঁত পণ্য উৎপাদিত হয় এ জেলায়। এ কারণে জেলার ব্র্যান্ডিং ঘোষণা করা হয়েছে এ তাঁত শিল্পকে। নাম দেয়া হয় ‘তাঁতকুঞ্জ সিরাজগঞ্জ’।
উৎপাদন বাড়াতে প্রতিটি কারখানায় যন্ত্র চালিত পাওয়ার লুমের যন্ত্রাংশ, ও সহজ কিস্তিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে এ জেলার তাঁত বোর্ড। তাঁত শ্রমিক শাহ আলম, সাহেদ আলী, সোবাহান, সুফিয়া, জাহানারা জানান ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে, এখন প্রতিদিন কাজ হচ্ছে। কিছুদিন আগেও মাঝে মাঝে তাঁত বন্ধ থাকতো তখন সংসারে অভাব-অনটন লেগে থাকতো। এখন তাঁত চালু হওয়ায় অভাব দূর হয়েছে।
এনায়েতপুর এলাকার তাঁত মালিক ইমরান খান বলেন, এখানে উৎপাদিত তাঁতের লুঙ্গি ও গামছার দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সারা দেশ থেকে ব্যপারীরা এসে বিভিন্ন হাট থেকে কিনে নিয়ে যান এসব শাড়ি-লুঙ্গি।
বেলকুচি তাঁত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ বলেন, এই জেলায় আড়াই লক্ষাধিক তাঁতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ কর্মরত রয়েছেন। এদের হাতে উৎপাদিত উন্নত মানের তাঁত সামগ্রী উৎপন্ন হচ্ছে যার সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে পৌঁছেছে। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। এরপর আমাদের উৎপাদিত লুঙ্গি ও গামছা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা আরো গর্ববোধ করি।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, জেলার অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম শিল্প হচ্ছে তাঁত শিল্প। বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার তাঁত পণ্য উৎপাদিত হয় এ জেলায়। তবে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি দেশের বস্তুখাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এখানে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
তাঁত শ্রমিক- মালিকদের উৎসাহ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে এ খাতের সম্ভাবনাময় দিক তুলে ধরে তাঁতবোর্ড সিরাজগঞ্জ জেলার লিয়াজোঁ অফিসার অমিত সরকার বলেন, তাঁতীদের মান উন্নয়ন ও পরামর্শে তাঁতীদের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। ইতিমধ্যে তাঁদের নিয়ে জেলা কেন্দ্রে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ সেন্টারটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, উন্নত যন্ত্রাংশের মাধ্যমে এ খাতের সাথে জড়িতদের আধুনিকায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে তাঁত বোর্ড।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তাঁতীদের নিত্য নতুন সুযোগ সৃষ্টিতে তাঁতকুঞ্জ নামে খ্যাত সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রকল্প আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তাঁতীদের মানোন্নয়নে যথাযথ কার্যকরী পরামর্শ পরিদর্শন ও সুযোগ সুবিধা সৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জ তাঁত কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।