
জহুরুল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের উল্টাডাব গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ সাধু সরদার লালন-পালন করেছেন ‘সোহাগ বাবু’ নামের একটি বিশালদেহী ষাঁড়। প্রায় ২২ মণ ওজনের এই অস্ট্রেলিয়ান জাতের ষাঁড়টির দাম চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
দর্শনার্থীদের কাছে ইতোমধ্যেই সোহাগ বাবু হয়ে উঠেছে কৌতূহলের বিষয়। প্রতিদিন শতাধিক মানুষ এই গরুটি একনজর দেখতে সাধু সরদারের বাড়িতে ভিড় করছেন। সম্ভাব্য ক্রেতারাও গরুটি দেখে আগ্রহ প্রকাশ করছেন এবং দরদাম করছেন।
আবু সাঈদ জানান, দুই বছর আগে তার গোয়ালের শংকর জাতের একটি গাভী একটি সাদাকালো ডোরাকাটা ষাঁড় বাছুর প্রসব করে। জন্মের পর থেকেই বাছুরটির আকৃতি ও স্বাস্থ্য স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ বড় এবং শক্তপোক্ত হওয়ায় আদর করে নাম রাখেন ‘সোহাগ বাবু’। সেই থেকে সন্তানসম ভালোবাসা আর নিবিড় যত্নে গরুটিকে লালন-পালন করছেন তিনি।
সাধু সরদার বলেন, “সোহাগ বাবুর যত্নই এখন আমার জীবনের প্রধান কাজ। প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে গরুটির পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। গোবর পরিষ্কার, গোসল, খাওয়ানো—সব কাজই নিজ হাতে করি।”
সোহাগ বাবুর জন্য প্রতিদিন মাঠে ঘুরে ঘাস সংগ্রহ করেন তিনি। লকলকে সবুজ ঘাস নিজের মাথায় করে ঘরে এনে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে খাওয়ান গরুটিকে। সেই সঙ্গে উন্নতমানের খইল, ভুট্টা, সোলা, খেসারি, মাসকালাই ও গুড়ের পানি মিশিয়ে বিশেষ খাদ্য তৈরি করে সকালে ও সন্ধ্যায় নিজ হাতে খাওয়ান। খাবারের মান নিয়ে কোনো রকম আপস করতে নারাজ সাধু সরদার।
নিজের আরাম ত্যাগ করে গরুর সঙ্গেই গোয়ালের পাশে টিনের ছাউনি ঘরে বসবাস করছেন তিনি। রাতেও একাধিকবার ঘুম ভেঙে সোহাগ বাবুর গোবর ও মূত্র পরিষ্কার করেন, যাতে গরুটির ঘুমে বা বিশ্রামে কোনো বিঘ্ন না ঘটে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং বয়সজনিত কারণে সোহাগ বাবুর পরিচর্যা করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি। তাই এ বছর কোরবানির ঈদে গরুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, “সোহাগ বাবুর মোট ওজন হবে প্রায় ২২ মণ। নিট মাংস পাওয়া যাবে কমপক্ষে ১৫ মণ। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলা হয়েছে। তবে আমি আরও ভালো দাম পাওয়ার আশায় আছি।”
সাধু সরদারের ছেলে রবিউল ইসলাম জানান, তার বাবা যখন মাঠে ঘাস আনতে থাকেন, তখন মা ও ভাবিরা গরুটির দেখভালে সাহায্য করেন। পরিবারের সবাই মিলে ভালোবেসেই সোহাগ বাবুকে বড় করে তুলেছেন।
গরুটি দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ, তরিকুল ইসলাম ও জিল্লুর রহমান বলেন, “শুধু শুনেই নয়, বাস্তবে দেখেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে-এতো বড় ষাঁড় আমরা এর আগে দেখিনি।”
একজন সম্ভাব্য ক্রেতা লোকমান হোসেন বলেন, “গরুটিকে দেখে পছন্দ হয়েছে। সাধ্যের মধ্যে দামও বলেছি, কিন্তু গরুর মালিক তা মেনে নেননি। তাই মন খারাপ করে ফিরে যেতে হয়েছে।”
বর্তমানে গরুটি বিক্রির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও, আশা করা হচ্ছে ঈদের আগেই এক যোগ্য ক্রেতার কাছে উঠবে সাধু সরদারের ‘সোহাগ বাবু’।