
নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো। তবে ঐক্য নয়, বরং বিভাজনের আভাসই স্পষ্ট হচ্ছে দলগুলোর অবস্থান বিশ্লেষণে। এখন পর্যন্ত অন্তত তিনটি পৃথক নির্বাচনি জোট বা সমঝোতার উদ্যোগ চলছে, যার প্রতিটিই ভিন্নমতের দিকে ইঙ্গিত করছে।
সূত্র বলছে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি এবং খেলাফত মজলিসের মধ্যে একটি সম্ভাব্য ঐক্যের উদ্যোগ চলছে। ইতোমধ্যে একটি লিয়াজোঁ কমিটিও গঠিত হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে রোববার বা সোমবার অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে একক প্রার্থী নির্ধারণসহ বৃহত্তর সমন্বয় নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
অন্যদিকে, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও জাকের পার্টি মিলেও পৃথক একটি জোটের পরিকল্পনায় রয়েছে। দলগুলো নিবন্ধিত ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে সুফিবাদভিত্তিক ঐক্যের চেষ্টা করছে।
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও সক্রিয়ভাবে একটি পৃথক নির্বাচনি জোট গঠনে আলোচনায় রয়েছে। দলটি একাধিক ইসলামি দলের সঙ্গে ‘এক আসনে এক প্রার্থী’ সমঝোতা চায়। তবে জামায়াতের সঙ্গে নেতৃত্ব এবং আকিদা সংক্রান্ত মতভেদের কারণে অনেক দল এখনো দ্বিধান্বিত।
জামায়াত নেতাদের ভাষ্য, দলটি গত বছরের আগস্ট থেকেই বিভিন্ন ইসলামি দল, আলেম সমাজ ও কওমি মাদ্রাসার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। তাদের লক্ষ্য—ধর্মীয় মতভেদ পাশ কাটিয়ে অন্তত নির্বাচনি ঐক্য গড়ে তোলা। জামায়াত মনে করে, এ প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থানের ওপর।
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, “আমরা এমন একটি রূপরেখা চাই, যাতে ইসলামপন্থি ভোট বিভক্ত না হয়। আলোচনার ফল যথাযথ সময়ে প্রকাশ পাবে।”
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ জানান, “আমরা নির্বাচনি অ্যালায়েন্স গঠনের পথে এগোচ্ছি। জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও তা আকিদার ভিত্তিতে নয়, কৌশলগত দিক বিবেচনায়।”
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কার্যনির্বাহী কমিটির আলোচনায় আসবে। আদর্শ ও মৌলিকত্ব বজায় রেখে নির্বাচনি সমঝোতা হতে পারে।”
অন্যদিকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, “আমাদের সঙ্গে জামায়াতের আদর্শগত ফারাক অনেক। তাদের সঙ্গে কোনো জোটে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট হবে—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আপাতত আলোচনার টেবিলেই সীমাবদ্ধ আছে ইসলামি রাজনীতির সমীকরণ। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে থাকছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।