
অনলাইন ডেস্ক: ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের অভ্যন্তরে ব্যাপক দুর্বলতা উন্মোচিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা, যা ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির সামরিক ও কৌশলগত প্রতিরক্ষার জন্য একটি ‘অস্তিত্ব সংকটময় গোয়েন্দা ব্যর্থতা’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ছিল পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি ও ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাও আহত হয়েছেন।
যদিও খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলকে তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে, তবুও বিশ্লেষকদের মতে ইরানের প্রতিক্রিয়ার সামর্থ্য বর্তমানে সীমিত।
বার্লিনভিত্তিক সেন্টার ফর মিডল ইস্ট অ্যান্ড গ্লোবাল অর্ডারের পরিচালক আলি ফাথুল্লাহ-নেজাদ বলেন, এই হামলা ইরানের সামরিক, গোয়েন্দা ও রাজনৈতিক অবকাঠামোর ভঙ্গুরতা প্রকাশ করে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে তেহরানের প্রতিশোধ এবং কমান্ড কাঠামো ভেঙে দিতে পরিচালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন), জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছিল, ইরান পরমাণু কর্মসূচির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইরান ঘোষণা দিয়েছে, তারা ‘উল্লেখযোগ্য হারে’ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়াবে।
ইরান বারবার পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনা অস্বীকার করলেও, পশ্চিমা বিশ্ব তা বিশ্বাস করছে না। বিশেষ করে, দেশটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা যেভাবে বাড়িয়েছে, তাতে এই পদার্থ কি তারা আসলেই বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে বাতিল হওয়ার পর থেকে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি ওমানে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ষষ্ঠ দফার আলোচনার কথা ছিল, কিন্তু ইসরায়েলি হামলার কারণে তা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।,
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, যতদিন না হুমকি দূর হচ্ছে, ততদিন এই অভিযান চলবে। ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক আলি ভায়েজ বলেছেন, আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি মাত্র। এর গতি ও পরিসর ইরানের প্রতিক্রিয়া গঠনে সক্ষমতা ধ্বংস করছে।
ইরান প্রায় ১০০টি ড্রোন ছুড়লেও, সেগুলোর বেশিরভাগই নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে ‘আয়রন ডোম’, দ্বারা আকাশেই ভূপাতিত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।,
এই সংঘাতের মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, চুক্তি করো, নইলে মৃত্যু ও ধ্বংস ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। তবে তার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মাধ্যমে ওমানে আলোচনার আয়োজন করা হলেও এখন তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের বিশ্লেষক এলি জেরানমায়েহ বলেন, এই হামলাগুলোর উদ্দেশ্যই ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চুক্তির সম্ভাবনা ধ্বংস করে দেওয়া।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, ইসরায়েলি কৌশল হয়তো তেহরানকে চাপে ফেলতে পারবে, কিন্তু একই সঙ্গে ইরান আরও বেশি আগ্রাসী পরমাণু কৌশল গ্রহণ করতেও প্ররোচিত হতে পারে। ভায়েজ বলেন, এই ধাক্কা ইরানকে একটি পরমাণু প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আগের চেয়েও বেশি মনোযোগী করে তুলতে পারে।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইসরায়েল