ডেস্ক রিপোর্ট: বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় জোর সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এরই মধ্যে দেশটির ১২ মাইল ভেতরে ঢুকে পড়েছে ইসরাইলের বর্বর সেনারা। সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখতে স্থল আক্রমণ আরও জোরদার করেছে ইসরাইল।
সিরিয়ায় একের পর এক ভূখণ্ড দখলের দিকে মনোনিবেশ করছে ইসরাইলি বাহিনী। দেশটির বিশাল এলাকা দখলে নিয়ে কমপক্ষে নয়টি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে তারা। সিরিয়ার দারা ও কুনেইত্রা শহরে রীতিমত তাণ্ডব চালাচ্ছে দখলদার সেনারা। সেখানে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান, আটক, নির্বিচারে গুলি, স্থানীয়দের ভয় দেখানো, চুরি ও হয়রানি এখন নিত্তদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
ইসরাইল তার দখলদারিত্বকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য আরেকটি কৌশল ব্যবহার করছে। আর তা হলো দক্ষিণ সিরিয়ার সংখ্যালঘু দ্রুজ জনগোষ্ঠীর সমর্থন আদায় করা এবং জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা। দ্রুজদের কাছে টেনে তাদের আনুগত্যের ওপর নির্ভর করে স্থায়ীভাবে নিজেদের উপস্থিতিকে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করছে ইসরাইল।
তবে এবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে অস্ত্র হাতে নিচ্ছেন সিরিয়ার বাসিন্দারা। স্থানীয়দের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে জানা যায়, দেশটির দক্ষিণের অনেক বাসিন্দা সশস্ত্র প্রতিরোধ তৈরির পথে এগোচ্ছেন। সম্প্রতি দখলদার সেনাবাহিনী কুনেইত্রা অঞ্চলের সুসিয়াহ গ্রামে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। বাসিন্দারা তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্র ব্যবহার করে দখলদার বাহিনীর মুখোমুখি হয়। তাদের তাৎক্ষণিকভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। যার ফলে সাতজন আহত হয়। সিরিয়ায় কাজ করা আমেরিকান সাংবাদিক বিলাল আব্দুল করিম সম্প্রতি সামজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানকার বেসামরিক নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সশস্ত্র লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।'
একদিকে নিজেদের আবাসভূমি হারিয়ে আহাজারি করছে সিরীয়রা, অন্যদিকে নতুন ভূখন্ড দখল করে উৎসবে মাতছে ইসরাইলিরা। সম্প্রতি সিরিয়ায় নতুন করে দখল করা অঞ্চলে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসরাইল। ইহুদিদের পাসওভার উৎসব উপলক্ষে গোলান মালভূমির ওই সব এলাকায় ইসরায়েলের বেসামরিক পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রোববার থেকে শুরু হওয়া এই পর্যটন চলবে এক সপ্তাহ। এরই মধ্যে প্রায় সব টিকিট কিনে নিয়েছেন পর্যটকেরা।'
ইসরায়েলের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সামরিক পাহারায় বুলেটপ্রুফ বাসে করে পর্যটকদের ছোট ছোট দলকে সিরিয়ার ভূখণ্ডের সর্বোচ্চ আড়াই কিলোমিটার ভেতরে নেওয়া হবে। পথে পড়বে হারমন পর্বতের সিরীয় অংশ। পর্যটকেরা রাদান নদীতে সাঁতার কাটতে পারবেন এবং নদীর তীরে ভ্রমণ করতে পারবেন। এ ছাড়া অটোমান সাম্রাজ্যের পরিত্যক্ত হেজাজ রেলপথের অংশ ঘুরে দেখতে পারবেন তারা।
ইসরিলি বাহিনীর এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনমত তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটির দক্ষিণের বাসিন্দারা। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইসরাইলি সামরিক অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে একটি বেসামরিক বিক্ষোভে যোগ দেন শত শত সিরিয়ান নাগরিক। তবে জানা গেছে, এসব অপকর্ম ধামাচাপা দিতে স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার জন্য বেসামরিকদের প্রতিনিয়ত হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।'