অনলাইন ডেস্ক: গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালায় চিকিৎসা ও পুষ্টিসেবা নিতে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় ১০ শিশুসহ অন্তত ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে সংঘটিত এ হামলার সময় তারা একটি মেডিকেল পয়েন্টের সামনে অপেক্ষা করছিলেন।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এর বরাতে জানা গেছে, হামলাটি দেইর আল-বালায় 'প্রজেক্ট হোপ' পরিচালিত একটি চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনের সারিতে ঘটে। হামলার পর সংস্থাটি তাৎক্ষণিকভাবে ক্লিনিকের কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
প্রজেক্ট হোপ-এর নির্বাহী পরিচালক রাবিহ তোরবে বলেন, “আজ সকালে নিরীহ পরিবারগুলোকে নির্মমভাবে হামলার শিকার হতে হয়েছে। তারা শুধুমাত্র চিকিৎসা নিতে এসেছিল। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের জঘন্য লঙ্ঘন।”
স্থানীয় একজন প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মেদ আবু উহদা বলেন, “হামলার পর দেখেছি এক মা তার শিশুকে জড়িয়ে ধরে মাটিতে পড়ে আছেন—দুজনেই আর নেই। আমাদের কী দোষ? আমাদের সন্তানদের অপরাধ কী?”
ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাসের সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, বিষয়টি তদন্তাধীন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরাইলি হামলায় মোট ৬৭ জন নিহত হয়েছেন।
একইদিনে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ঘিরে আলোচনা চলছিল। হামাস ১০ বন্দি মুক্তির শর্তে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। তবে ইসরাইল যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় অভিযান চালাতে চায়, যা নিয়ে মধ্যস্থতাকারী কাতার জানায়—চুক্তি এখনও জটিলতার মধ্যে রয়েছে।
ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, “যদি দুই পক্ষ ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে একমত হয়, তবে ইসরাইল স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসবে।”
এদিকে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ট্যাংক ও বুলডোজার নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। গুলিবর্ষণ ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ছে শিবিরে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন।
গাজার নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহতদের ঢলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম চাপ তৈরি হয়েছে। হাসপাতালের পাশে অবস্থান নিয়েছে ইসরাইলি ট্যাংক, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
অবরুদ্ধ গাজা ক্রমেই পরিণত হচ্ছে এক বিশাল মানবিক শোকস্তব্ধ ভূমিতে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.