
অনলাইন ডেস্ক: ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ওপর সাম্প্রতিক হামলার মূল উসকানিদাতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি জানিয়েছে তেহরান। জাতিসংঘ মহাসচিব এবং নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এমন দাবি জানান ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচি।
তিনি ওই চিঠিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের নথি হিসেবে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
চিঠিতে আরাঘচি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের ১৩ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ইসরাইল যে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে, তা জাতিসংঘ সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের সামিল। এসব হামলায় ইরানের আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, ত্রাণকেন্দ্র, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও বেসামরিক স্থাপনা ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ফোরদো, আরাক, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে আইএইএর তত্ত্বাবধানে থাকা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোও আক্রান্ত হয়। এসব হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) ও আইএইএ প্রস্তাবের গুরুতর লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরাঘচি বলেন, এসব হামলা আন্তর্জাতিক আইনের বহু মৌলিক নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। এর মধ্যে রয়েছে—
জীবনধারার অধিকার (আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের ৬ অনুচ্ছেদ)
অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধকরণ (জাতিসংঘ সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদ, ১৯৭০ সালের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব ২৬২৫)
আগ্রাসনের ওপর নিষেধাজ্ঞা (১৯৭৪ সালের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব ৩৩১৪)
ইরানি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার (জাতিসংঘ সনদের ১(২) অনুচ্ছেদ এবং আন্তর্জাতিক অধিকার সংবিধিসমূহ)
চিঠিতে তিনি আরও জানান, চলতি জুন মাসে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও), ব্রিকস, ইউনাইটেড নেশনস চার্টার ফ্রেন্ডস গ্রুপ, আরব লিগ, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) পৃথক বিবৃতিতে ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে এটিকে জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন বলে ঘোষণা করেছে।
আরাঘচি সতর্ক করেন, এ ধরনের হামলার নির্দেশদাতা রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারাও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। তিনি বলেন, এই আগ্রাসনের পরিণতি এড়িয়ে গেলে জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হবে এবং পুরো বিশ্বে অরাজকতা ও আইনহীনতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
সেই সঙ্গে তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানান, ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ইসরাইলের এই আগ্রাসনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে ক্ষতিপূরণসহ দায়বদ্ধ করতে এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে।
পরিশেষে, আরাঘচি তার চিঠি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের নথি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানান।