
নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জনগণের মতামত জানতে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে এই গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন হবে, নাকি আলাদা দিনে—তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের পক্ষে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল চাইছে নভেম্বরে, নির্বাচনের আগেই গণভোট হোক।
বিশ্লেষকদের মতে, আলাদা দিনে গণভোট করলে সরকারের অতিরিক্ত তিন হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে, যা সংসদ নির্বাচনের ব্যয়ের প্রায় সমান। আর একই দিনে করলে ব্যয় বাড়বে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। তাদের মতে, দুই মাসের ব্যবধানে দুটি জাতীয় নির্বাচনের মতো বড় আয়োজন করা ইসির সক্ষমতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে ইসির। প্রয়োজনীয় কেনাকাটাও প্রায় শেষ। কিন্তু গণভোটের জন্য কোনো প্রস্তুতি বা বাজেট এখনো নির্ধারিত হয়নি। ফলে আগে গণভোট হলে নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ বাড়বে।
বিশ্লেষকরা আরও বলেন, নভেম্বর মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা চলে বলে এ সময় গণভোট আয়োজন শিক্ষায় প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি অল্প সময়ে ব্যালট ছাপানো, কাগজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করাও ইসির জন্য কঠিন হবে।
নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীম বলেন, “গণভোট যে সময়ই হোক, এটি হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আগে করলে ইসির সব মনোযোগ গণভোটে চলে যাবে, যা সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। আবার একই দিনে করলেও রাজনৈতিক দলগুলোর অগ্রাধিকারে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে।”
ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, “একই দিনে আয়োজন করলে ব্যয় ১০–২০ শতাংশ বাড়লেই যথেষ্ট। কিন্তু আলাদা দিনে করলে ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হবে। একইভাবে আগে গণভোট করতে হলে ব্যাপক কেনাকাটা ও সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।”
এদিকে গণভোট নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এখনো ইসিতে পৌঁছায়নি। সংস্থাটির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “গণভোট হবে কি হবে না, কখন হবে—এসব বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। সিদ্ধান্ত এলেই নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী কাজ করবে।”
১৯৯১ সালের পর দেশে আর কোনো গণভোট অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি গণভোটে ব্যয় ছিল জাতীয় নির্বাচনের ব্যয়ের প্রায় সমান। ফলে এবারও পৃথক দিনে গণভোট হলে ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সর্বশেষ গণভোটের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান প্রস্তুতির অবস্থা বিবেচনায় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে আয়োজনই হতে পারে বাস্তবসম্মত বিকল্প। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের হাতেই।