নিজস্ব প্রতিবেদক: বছরে একটি বিসিএসের কার্যক্রম শেষ করতে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এর অংশ হিসেবে লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর ক্রমানুসারে লিখতে হবে চাকরিপ্রার্থীদের। এছাড়া পরীক্ষকদের খাতা মূল্যায়ন করতে হবে পিএসসিতে বসেই।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, বিসিএসের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা সেভাবে আলোর মুখ দেখেনি। আগের তুলনায় বর্তমানে বিসিএসের কার্যক্রম শেষ হতে সময় কম লাগলেও কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা যায়নি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেশ কিছু বিষয় সামনে এসেছে। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অধিক সময় ব্যয় হওয়া এবং পরীক্ষার্থীদের উত্তর ক্রমানুসারে না থাকা অন্যতম।'
সূত্র বলছে, পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নের ক্রমানুসারে খাতায় উত্তর লিখলে তা মূল্যায়ন করতে সুবিধা হয়। প্রশ্নের উত্তর কেমন হতে পারে আর প্রার্থী কীভাবে উত্তর লিখেছেন তা সহজেই বুঝতে পারবেন পরীক্ষকরা। এজন্য ৪৬তম বিসিএস থেকে প্রশ্নের ক্রমানুসারে খাতায় উত্তর লেখার বাধ্যবাধকতা রাখা হচ্ছে। কোনো প্রার্থী চাইলে ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর লেখার পর ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন, তবে তাকে ২-৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর লেখার জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পিএসসি’র উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের ক্রমিক নাম্বারই নয়; খাতায় উত্তর লেখার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। একটি প্রশ্নের উত্তর কতটুকু জায়গার মধ্যে লিখতে হবে তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীদের ওই জায়গার মধ্যেই প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। নির্ধারিত জায়গার বাইরে প্রশ্নের উত্তর লেখার সুযোগ থাকবে না। ৪৭তম বিসিএস থেকে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে।
এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, ৪৬তম বিসিএস থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তরগুলো প্রশ্নের ক্রমানুসারে লেখতে হবে যা প্রশ্নপত্রে স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকবে। কেউ চাইলে অন্য প্রশ্নের উত্তর আগে লিখতে পারবেন। তবে তাকে অবশ্যই ক্রম অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তর লেখার জায়গা খাতায় রাখতে হবে।
পিএসসি সুত্রে জানা গেছে, ৪৬তম বিসিএস থেকে পরীক্ষকদের পিএসসিতে বসেই খাতা মূল্যায়ন করতে হবে। লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য একেকটি দলে ১৩-১৪ জন জনবল থাকবেন। এদের মধ্যে একজন প্রধান পরীক্ষক থাকবেন। এছাড়া দুই থেকে তিনজন এমন পরীক্ষক থাকবেন যারা অন্য পরীক্ষকদের কোনো ভুল হলে সেটি সমাধান করে দেবেন। একজন ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দেখবেন, অন্যজন ২ নম্বর দেখবেন। এভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দেখা হবে। ফলে খাতা দেখার জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরীক্ষকের প্রয়োজন হবে না।'
ওই সূত্র আরও জানায়, নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষকদের খাতা দেখার আগে প্রশ্নের উত্তরপত্রও সরবরাহ করা হবে। এ ক্ষেত্রে গণিত ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া হবে। আর বর্ণনামূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য উত্তরের গঠন দেওয়া হবে।
পিএসসিতে বসে খাতা দেখার পাইলটিং হিসেবে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার গণিত বিষয়ের খাতা পিএসসি কার্যালয়ে দেখা হয়েছে। মাত্র ৯ দিনে খাতা দেখার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। যদিও চারদিনে খাতা দেখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে পরীক্ষকদের সবগুলো দলকে একত্রে না পাওয়ায় সময় কিছুটা বেশি লেগেছে।
এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি চালু হলে খাতা দেখার মান বৃদ্ধি পাবে; একই সাথে সময়ও বাঁচবে। এছাড়া একেকজন পরীক্ষক একেকভাবে দেখার সুযোগও পাবেন না। সব মিলিয়ে এক বছরে একটি বিসিএস কার্যক্রম সম্পন্ন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।'
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.