
সেলিম রেজা স্টাফ রিপোর্টার: বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় বৈষম্য নিরসন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) দ্বৈত ব্যবস্থার অবসান এবং ৭ দফা দাবিতে পুনরায় কর্মসূচিতে যাচ্ছে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী।
আগামী ২৭ মে মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে জরুরি বিদ্যুৎ সেবা চালু রেখে সব পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একইসাথে এমআরসিএমদের (মিটার রিডিং ও সংগ্রহ কর্মী) সকল রিডিং বই জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়; বরং আরইবি’র দীর্ঘদিনের শোষণ, বৈষম্য ও দমন-পীড়নের প্রতিবাদে একটি ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের আন্দোলন।
আন্দোলনের পটভূমি:
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আরইবি-পবিস অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত সকল চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের স্থায়ীকরণের দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা হয়। তবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় মে ও জুলাই মাসে বিদ্যুৎ সেবা সচল রেখে পর্যায়ক্রমে ৫ ও ১০ দিনের কর্মবিরতি পালন করা হয়।
পরবর্তীতে আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে গঠিত সমন্বয় কমিটির সভাগুলোতে আরইবি অনুপস্থিত থাকায় পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। এরপর প্রেস ক্লাব ও জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পরও আন্দোলনকারী কর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, চাকরিচ্যুতি ও গ্রেফতারসহ নানা দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
একইসাথে ২৩ অক্টোবর গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি তিনটি সংস্কার মডেল উপস্থাপন করলেও দীর্ঘ আট মাসেও চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পায়নি।
অভিযোগ ও দমনপীড়নের চিত্র:
গত চার মাসে নতুন করে ৫ জনকে চাকরিচ্যুত, ৫০ জনেরও বেশি কর্মীকে বরখাস্ত ও সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রায় ৬ হাজার কর্মীকে নিজ জেলা থেকে শত শত কিলোমিটার দূরের কর্মস্থলে বদলি করা হয়। চলতি মে মাসে বদলি করা হয়েছে আরও ৩ হাজারের বেশি লাইনক্রু। এদের অনেকের চাকরিতে বদলি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও এই আদেশ কার্যকর করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরের কারণেও ৭ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

৭ দফা দাবি:
১. আরইবি-পবিস দ্বৈত ব্যবস্থার অবসান
২. আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ
৩. মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার
৪. বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল
৫. চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণ
৬. সকল শাস্তিমূলক বদলি বাতিল
৭. নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও শিফটিং ডিউটি বাস্তবায়ন
সহমত ও সংহতি:
এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে একাধিক রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, শিক্ষক, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজ। এর মধ্যে রয়েছে এনসিপি শ্রমিক ও প্রকৌশলী উইংস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আইডিইবি, এফডিইবি, অবসরপ্রাপ্ত জিএম ফোরামসহ অনেকেই।
আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, “আমরা বিদ্যুৎ সেবা বন্ধ করে নয়, চালু রেখেই আন্দোলন করছি। আমরা কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছি না, বরং বৈষম্যমুক্ত আধুনিক বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার জন্য লড়ছি। আমাদের দাবি মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত না করা হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো। এর দায়ভার সরকার ও বিদ্যুৎ বিভাগকে নিতে হবে।”